সাতক্ষীরার বৈকারী সীমান্তের বিপরীতে ভারতের খলিসা এলাকায় শনিবার ভোর রাতে বাংলাদেশী ভেবে গুলি বর্ষণ করলে বিএসএফের গুলিতে একজন ভারতীয় নাগরিক আহত হয়েছে। এঘটনার পর বিএসএফ খলিসা ক্যাম্পের জওয়ানরা ওই এলাকা থেকে ৩ বাংলাদেশী গরু রাখালকে ধরে নিয়ে গেছে। বিএসএফ’র হাতে গ্রেফতার তিন বাংলাদেশী হলো সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের শেখ আব্দুল ওয়াজেদের পুত্র আব্দুল খালেক, একই উপজেলার নলতা গ্রামের মাজেদ গাজীর পুত্র আজিজ সরদার ও শাহজাহান আলীর  পুত্র শাহীনুর রহমান।

এ ঘটনায়  শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে  বিজিবি ও বিএসএফ এর মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়  এবং বিকালে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায় পৃথক দু’টি পতাকা বৈঠক অনুষ্টিত হয়। পতাকা বৈঠকে তাদের ফেরৎ চাওয়া হলেও বিএসএফ তাদেরকে ফেরৎ দেয়নি।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার ভোর রাত সাড়ে ৪ টার দিকে বিএসএফ খলিসা ক্যাম্পের সদস্যরা সাতক্ষীরার বৈকরী সীমামেত্মর বিপরীতে ভারতের খলিসা এলাকায় বাংলাদেশী গরু রাখাল ভেবে তাদের লক্ষ্য করে পরপর সাত রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। এতে বিএসএফের ছোড়া গুলিতে আহত হয় ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সরূপনগর থানার আমুদিয়া গ্রামের কবিরুল ইসলাম। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিএসএফ  ভারত থেকে গরু আনার সময় ওই এলাকা থেকে তিন বাংলাদেশী গরু রাখালকে ধরে নিয়ে যায়। এদিকে বাংলাদেশী গরু রাখারদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র পক্ষ থেকে সকালে প্রতিপক্ষ বিএসএফ এর কাছে একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হয়। এঘটনায় বেলা সাড়ে ১২ টায় সদর উপজেলার বৈকারি সীমামেত্ম বিজিবি ও বিএসএফ এর মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায় একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৮ সদস্যের বাংলাদেশে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কুশখালী বিজিবি’র কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার সুলতান আলী এবং বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কৈজুড়ী ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর এস এন নায়ার।

পতাকা বৈঠক শেষে সুবেদার সুলতান আলী জানান, বিএসএফ তিন জন বাংলাদেশী নাগরিককে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি।

তবে বিএসএফ’র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে বলা হয় যে,বাংলাদেশী গরু রাখালদের হামলায় গোবরদাঁ ক্যাম্পের হেড কনস্টেবল সারতাজ সিং ও কনস্টেবল জিন্দার পাল গুরুতর জখম হয়ে কলকাতার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে এঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকালে বৈকারি সীমামেত্ম বিজিবি ৩৮ ব্যাটালিয়ন ও ভারতীয় বিএসএফ ১৫২ ব্যাটালিয়নের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায় আরও একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্টিত হয়। বিকেল সাড়ে ৪ টায় শুরু হওয়া ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের বৈঠকটি শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায়।

সাতক্ষীরার বৈকারী সীমান্তের কালিয়ানি এলাকায় অনুষ্ঠিত  এই পতাকা বৈঠকে ১৫ সদস্যের বিজিবি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন, সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৮ ব্যাটালিয়নের  অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু বাসিত ও অপারেসন কর্মকর্তা মেজর খন্দকার হারুনর রশীদ।

অপরদিকে ১২ সদস্য ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ১৫২ কল্যানী বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট মনোজ কুমার ও ভারতের কেজুরি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার এসি নায়ার।

পতাকা বৈঠকে বিএসএফ আটককৃত তিন বাংলাদেশীকে বিজিবি’র সামনে হাজির করে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করায় তাদেরকে ফেরত দেয়নি বিএসএফ। পতাকা বৈঠক শেষে বিজিবি ৩৮  ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু বাসির জানান, আটককৃতদের বিএসএফ এর কাছে ফেরত চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাদের ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বিএসএফ নেতৃবৃন্দ।

পতাকা বৈঠকে বিএসএফর পক্ষ থেকে তাদের সদস্য আহত হওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো যেহেতু ঘটনাটি রাতে এবং ভারতের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে সেটি কারা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নাজমুল হক/সাতক্ষীরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here