এক সপ্তাহের মধ্যে দুবার বিএসএফর হাতে বাংলাদেশী গরু রাখাল আটকের ঘটনায় পুরো সাতক্ষীরা সীমান্ত জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গরু ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। পরিস্থিতি সামাল দিতে সীমান্তের ১৯ টি ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকা দিয়ে গরু আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞ আরোপ করেছে বিজিবি।
এদিকে ভারতে আটক তিন বাংলাদেশীকে ফেরত দেয়নি বিএসএফ। তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বাদুড়িয়া থানায় প্রচলিত আইনে মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিএসএফ।
সীমান্ত ও বিজিবি সূত্র জানায়, ৩০শে জানুয়ারি বৈকারী সীমান্তের বিপরীতে বিএসএফের হাতে আটক হয় তিন গরু রাখাল। এরা হল, সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামের বাবুরালীর ছেলে কামরুল ইসলাম (৩৫), তার ভাই জিয়ারুল ইসলাম(৩০), একই গ্রামের আজিবার রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান (২৯)। এদের উপর নির্যাতনের এক পর্যায়ে দড়ি দিয়ে বেধে রাখে বিএসএফ। কিন্ত কামরুল দড়ি ছিঁড়ে পালায়। অন্যান্যের বিষয়ে এখনও কোন খবর পায়নি তাদের পরিবার। এ ঘটনার সপ্তাহ পার না হতেই শনিবার রাত তিনটার দিকে বিএসএফর গোবরডা ক্যাম্পের সদস্যদের সাথে বাংলাদেশি গরু রাখালদের সহিংসতায় বিএসএফ তিন বাংলাদেশী গরু রাখালকে ধরে নিয়ে যায়।
ধৃতরা হল, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার গনপতি গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াজেদের ছেলে আব্দুল খালেক (৫৫), একই উপজেলার নলতা গ্রামের মাজেদ গাজীর ছেলে আজিজ সরদার (৩৬) ও চৌবাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে শাহীনুর রহমান (২৮)। তাদের বিরুদ্ধে বাদুড়িয়া থানায় মামলা দায়ের হওয়ায় তাদেরকে ফেরত দেয়নি বিএসএফ। তবে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিজিবি কর্মকর্তাদের কাছে তাদেরকে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছে। এদিকে সীমান্তে সহিংসতা বন্ধে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ৩৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।
অনির্দিষ্ট কালের জন্য গরু করিডর বন্ধ ঘোষণা করেছেন সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল আবু বাছিত। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীদের সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ড অতিক্রম করা যাবে না, এমন মুচলেকা নেয়ার পর গরু আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞ প্রত্যাহার করা হবে। পাশাপাশি সীমান্তের ১৯টি ক্যাম্পের অধীনে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার গরু করিডর হয়।
গরু প্রতি ৫ শত টাকা হারে সরকার রাজস্ব পায় প্রতিদিন দশ লাখ টাকা।
সীমান্তে সহিংসতা বন্ধে এ পদক্ষেপ মেনে নেয়ার আহবান জানিয়ে ৩৮ বিজিবির অপস কর্মকর্তা মেজর হারুন-অর-রশিদ জানান, ব্যাটালিয়ন বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ হতে বলা হয়েছে, তাদের ওপর বাংলাদেশী গরু রাখাল ও পাসিংম্যানরা প্রায়ই হামলা চালায়।
এর প্রমাণ স্বরুপ তারা আমাদেরকে ঘটনাস্থল ও বাংলাদেশী গরু রাখালদের হামলায় আহত গোবরদাঁ ক্যাম্পের হেড কনস্টেবল সারতাজ সিং ও কনস্টেবল জিন্দার পালের রক্তও দেখিয়েছে।
সার্বিক বিষয় সামাল দিতে সীমান্তে গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গরু ব্যবসায়ীদের মুচলেকা পাওয়ার পরই গরু করিডরের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নাজমুল হক/সাতক্ষীরা