জাতীয় রাজস্ব বোডের্র (এনবিআর)এক মৌখিক আদেশে ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতি ট্রাক ফলের গাড়িতে দশ টনের ট্রাক্স ধার্য্য করায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরে রাজস্ব আদায় বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। ভারত থেকে ফল আমদানিতে শর্তারোপ করায় হঠাৎ করে ফলের গাড়ি কমে গেছে। ফলে দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব প্রাপ্তির এ বন্দরে এখন রাজস্ব আসছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।
এনবিআর এর এই হটকারি সিদ্ধন্তের ফলে ৫/৭ টনের ফলের গাড়ি বন্দরে ঢুকলেও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে ১০ টনের। এছাড়া ৫ টনের গাড়ি ঢোকানোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কম পরিমান ফল আমদানি করেও বেশী ট্রাক্স প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতির মূখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে লাকসানের আশংকায় ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। সহাস্রাধিক মানুষের রুটি রুজির অবলম্বন এই বন্দরে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা অনেক কমে গেছে। ইতিমধ্যে এনিয়ে বন্দর অভ্যন্তরে শ্রমিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ফলে এ বন্দর রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ সভা ও সাংবাদিক সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের কথাও জানিয়েছে শ্রমিকরা। এই সুযোগে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভোমরা বন্দর নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত শুরু করেছে। নানাবিধ এসব কারনে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর এখন শুধু বন্ধের অপেক্ষায়
ভোমরা বন্দরের সাথে সংশিস্নষ্ট অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভোমরা বন্দর দিয়ে আসা ৭ ট্রাক আপেল, আনার ও কমলা লেবু ছাড় করিয়ে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা ত্যাগ করে। ট্রাকগুলি বন্দর ত্যাগ করে সদরের ঝাউডাঙ্গা বাজারে পৌছালে বিজিবি’র কর্মকর্তারা তা আটক করে। বেশি পন্য আছে এমন অভিযোগে তাদেরকে হয়রানি করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা এম এম কামাল হোসেনের হসত্মক্ষেপে বিজিবি ট্রাক গুলি ছেড়ে দিলেও খামাখা হয়রানি করা হয়েছে এমন অভিযোগ ফল আমদানিকারকদের। একই ঘটনা ঘটে ৫ নভেম্বর। বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ৪ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের ফল ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরার বাকাল এলাকায় আটক করে বিজিবি। তারা ট্রাক গুলো বিজিবি’র হেডকোয়াটারে নিয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত পন্য না পাওয়ায় আবারও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই ১১টি ট্রাক আটকের একদিন পর ছেড়ে দেওয়ায় কাচা পন্য হওয়ায় ব্যবাসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাচা মালের (বিষেশ করে ফল) আমদানিকারকরা এ বন্দরে আসতে ভয় পাচ্ছে। কাষ্টমস এর ছাড়কৃত পন্য বিজিবি কর্তৃক আটকের ঘটনায় অতি উৎসাহি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ভোমরা স্থলবন্দরের দায়িক্তরত সুপারিনটেনডেন্ট এস এম কামাল হোসেন জানান, গত নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মৌখিক ভাবে এক আদেশে খূলনা কমিশনারের মাধ্যমে ভোমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, আমদানিকৃত পন্যবাহী ট্রাকে যতটাই পন্য (বিশেষ করে ফল) থাকুক না কেন তা ১০ টন দেখিয়ে সেই পরিমান রাজস্ব আদায় করতে হবে। কোন ট্রাকে ১০ টন পন্য না থাকলেও তাকে ১০ টনের ডিউটি সরকারকে দিতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা কেউ ৫ টন, কেউ ৭ টন কেউ ১০ টন পন্য আমদানি করে থাকে। এছাড়া ৫টন পন্য বোঝাই ট্রাক বন্দরে ঢোকা নিষেধ করেও দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এতে করে চলতি অর্থ বছরের ১’শ ৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পুরম্ননে কোন সমস্যা হবেনা না বলে তিনি জানান।
বন্দর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ একটি স্বার্থন্বেষী মহলের ইন্ধনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কমিশনার অফিসের মাধ্যমে এধরনের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে এ বন্দরের পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরে এধরনরে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি এনবিআর। পাশাপাশি অবকাঠামোগত সমস্যা তো আছেই। এরপরও কলকাতা থেকে ঢাকার দুরত্ব ভোমরা বন্দর দিয়ে কম হওয়ার কারনে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে খুবই আগ্রহী। এরআগে অতি অল্প শূল্কায়ন পন্য আমদানি করার অনুমতি থাকলেও বেশি শূল্কায়নের পন্য আমদানির অনুমতি ছিলনা। বর্তমানে সেটিও নেই। এদিকে রাজস্ববোডের্র এই সিন্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীরা ৫ টন পন্য আমদানি করে ১০ টনের ডিউটি দিতে রাজি না হওয়ায় ইতিমধ্যে ছোট ও মধ্যম শ্রেণীর অনেক ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে ভোমরা বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে। ফলে ভোমরা বন্দর এখন শুধু বন্ধের অপেক্ষায়।
এদিকে বন্দরের অন্যান্য সুত্র জানায়, ভোমরা বন্দরে ইতিপূর্বে চাকুরি করেন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ হারুন উর রশিদ। তিনি অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় বদলি হয়ে চলে যান বরিশালে। সেখান থেকে বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোডের্র সমন্বয় সেলে কমর্রত আছেন। ভোমরা বন্দরে চাকরি করার সময় দুর্ণীতির পাশাপাশি গ্রম্নপিং করাসহ নানাবিধ ষড়যন্ত্রের বিষয়টি ছিল বন্দর অভ্যমত্মরে সকলের কাছে খুবই পরিস্কার। এখন তিনি জাতীয় রাজস্ব বোডের্র সমন্বয় সেলে থেকে ভোমরা বন্দর বন্ধ করার মহাষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। বন্দরের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, সাতক্ষীরা কাষ্টমস এক্সসাইজ ভ্যাট জজকোর্ট এলাকায় অবস্থিত অফিসে মাষ্টাররোলে কমর্রত কর্মচারি জনৈক গৌতম কুমার হেলা এনবিআর এর সমন্বয় সেলের কর্মকর্তা শেখ হারুন অর রশিদকে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে আসছিল। তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঈদের আগে বিজিবি কাষ্টমসের ছাড়কৃত ১১ ট্রাক পন্য আটক করে কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও হয়রানি করে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি বন্দর সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারিসহ ব্যবসায়ীরা জানতে পেরে সাতক্ষীরা ভ্যাট অফিসকে অবহিত করার পর মিথ্যে তথ্য প্রদানকারি কথিত সোর্স গৌতমকে ভ্যাট অফিস থেকে বিদায় করে দেয়া হয়।
ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু জানান, এ বন্দরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সহাস্রাধিক মানুষ। আমরা চেষ্টা করছি বন্দরটিকে রক্ষা করতে। তবে স্বাভাবিক ভাবে ব্যর্থ হলে জেলাবাসীকে নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না বলে তিনি জানান।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নাজমুল হক/সাতক্ষীরা