ঢাকা : বাংলাদেশে বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধে যে জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সাতক্ষীরা অন্যতম।

সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে গিয়েছিলেন নাগরিকদের একটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ এর একটি প্রতিনিধি দল।

সেখান থেকে ঘুরে এসে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অভিযোগ করে বলছেন, একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধীরা যে ধরনের সহিংসতা চালিয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি তারা সেখানে দেখতে পেয়েছেন।

বিরোধী জোটের ডাকে অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে সাতক্ষীরা জেলায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

সাতক্ষীরা জেলার কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে এসে ‘বাংলাদেশ রুখে দাড়াও’ নামে নাগরিকদের একটি সংগঠন সেখানকার পরিস্থিতিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সাথে তুলনা করছে।

সাতক্ষীরা ঘুরে এসে প্রতিনিধি দলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ সাদেকা হালিম সাতক্ষীরার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, সহিংসতার চিত্র বর্ণনা করার মতো নয়।

তিনি বলেন: রাস্তায় প্রচুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অবরোধ দেয়ার জন্য তারা জায়গায় জায়গায় রাস্তা ভেঙে রেখেছে। আমার মনে আছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে যেরকম দেখেছিলাম। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম তাও আমার স্পষ্ট মনে আছে হাইওয়ে কিভাবে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বেইলি ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তেমনই চিত্র যেন আমি সাতক্ষীরায় দেখে এসেছি।

সাদেকা হালিম আরো বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে তারা দেখেছেন যে পরিকল্পিতভাবে জামাত-শিবিরের হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছে সেখানকার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ।

আমরা দেখেছি হিন্দু দোকান-বাড়িতে লুটতরাজ চলছে। আর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, এমনকি তাদের কুপিয়ে মারা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ। যাদের বাড়িঘরে বিলাসের কোন চিহ্ন নেই, তারা সাধারণ মানুষ, টিনের চালায় হাসমুরগী পালন করে তারা থাকে। কিন্তু তারা ডেডিকেটেড কর্মী।

সাতক্ষীরায় বহু দিন ধরেই জামায়াত শিবিরের একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে।

বিরোধী জোটের আন্দোলনে গত ২৬শে নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচিতে বেশ কিছু দিন ধরে রাস্তা কেটে, সড়কের ওপর গাছের গুড়ি ফেলে সাতক্ষীরাকে দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করেই রাখা হয়।

আর অবরোধ শুরু হওয়ার প্রথম তিন সপ্তাহে সীমান্তবর্তী এই জেলায় জামায়াত শিবিরের হাতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের বেশ কজন নেতা-কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর গত ১৫ই ডিসেম্বর থেকে সেখানে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়।

সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে নাগরিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ রুখে দাড়াও’ এর প্রতিনিধিরা বলছেন, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে সহিংস হামলা প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতারা সাধারণ মানুষের পাশে দাড়ায়নি, এমনকি প্রশাসনও এগিয়ে আসেনি।

তবে এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী তাদের লোকবলের অপ্রতুলতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন যে, এমন পরিস্থিতিতে তখন আমরা র‍্যাব বিজিবিসহ অন্য বাহিনীর সহায়তা চেয়েছিলাম।

আর এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সহিংস হামলার জন্য মূলত যে দলটিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, সেই জামায়াতে ইসলামির সাতক্ষীরা জেলার প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান ক্ষমতাসীন দলের প্রতি পাল্টা অভিযোগ এনে বলছেন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আক্রমণ চালিয়ে তাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

মিঃ রহমান বলেন, কয়েকদিন যাবত একটানা যুবলীগ শ্রমিকলীগ নেতার নেতৃত্বে বিভিন্ন বাড়িঘরে লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আর আমাদের বিরুদ্ধে এর অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি পুরোপুরি পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক।

যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সাতক্ষীরার পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বলে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা ও সেখান থেকে ঘুরে আসা নাগরিক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here