সাতক্ষীরার তালায় এস এস সি ও দাখিল পরীক্ষার ফর্ম-ফিল-আপ করার জন্যে সরকারী নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। এবারের স্বরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কিছু কিছু বাড়ি ফিরলেও এখনও অনেক পরিবার রয়েছে বিভিন্ন সড়কের উপর খোলা আকাশের নিচে। এ অবস্থায় সরকার উপজেলায় এস এস সি পরীক্ষার্থীদের বোর্ড ফি মওকুফ না করায় অর্থাভাবে বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তালা উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার বোর্ড ফি মওকুফ করেনি। বরং সংশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার টাকা আদায় করছে।
তালা উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের ১৯০ টি গ্রামের প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে প্রায় ৪ মাস বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও সড়কের উপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করে। ত্রানই হয়ে দাঁড়ায় তাদের একমাত্র সম্বল। ভেসে যায় মৎস্য ঘেরসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। জলাবদ্ধতার কারনে এবার আমন ধান রোপন সম্ভব হয়নি। উপজেলার প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষি ও দিন মুজুর। এহেন বিধস্তকর পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের ফর্ম-ফিল-আপের টাকা যোগাড় নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন।
সংশিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ৬৪ টি। মাদ্রাসার সংখ্যা ৩৫ টি। এ বছর এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। যশোর শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার ফর্ম-ফিল-আপ ফি নির্ধারন করেছে এসএসসি-মানবিক ও বানিজ্য শাখায় ১ হাজার ৯৫ টাকা,বিজ্ঞান শাখার জন্য ১ হাজার ১ শত ৮৫ টাকা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্টাগুলো পরীক্ষা ফি,কেন্দ্র ফি,কোচিং,যাতয়াত বা অন্যন্য,সমিতি চাঁদা,টেষ্ট ফি ও বিদ্যালয় উন্নয়ন মিলে মানবিক,বানিজ্য ও বিজ্ঞান শাখায় মোট ১ হাজার ৯ শ’ থেকে ২ হাজার ১ শত টাকা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে আদায় করছে। যা নিয়ে কৃষি ভিত্তিক জীবিকা নির্ভর করা অভিভাবকদের পাশাপাশি শ্রমজীবি অভিভাবকেরা বিপাকে পড়েছেন। এমনিতেই পরিবার পরিজনের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত যোগাড় করতেই নির্ঘুম রাত কাঠাচ্ছেন বানভাসী মানুষ।
ঘোনা পলীমঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিঞ্জান বিভাগের ছাত্র শামিম হোসেন জানায়,‘ফর্ম-ফিল-আপ করা বাবদ স্কুলে ২ হাজার ১ শ’ টাকা দিয়েছি। বন্যায় প্রায় ৩ মাস পানিবন্দি ছিলাম। আব্বা বাড়িতে বেকার। অন্যের কাছে থেকে সুদ করে নিয়ে পরীক্ষা ফি’র টাকা দিয়েছে।’
শাহিনের পিতা মিনাজ উদ্দীন গাজী অভিযোগ করে বলেন,দীর্ঘদিন পানি বন্দি থাকার পর স¤প্রতি বাড়ি ফিরেছি। জমি জায়গায় ফসল সব শেষ হয়ে গেছে। অন্যের কাছে থেকে সুদ করে ছেলের পরীক্ষার ফি দিয়েছি। না দিলে ছেলে পরীক্ষা দিতে পারবে না। এ জন্যেই যে ভাবে হোক টাকা জোগাড় করতে হয়েছে।
সুজনশাহা বালিকা বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী সীমা খাতুন জানায়,বাবা দিন মুজুর। সংসারে লোক ৫ জন। বন্যায় ২ মাস বাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলাম। ঈদুল আযাহার ২ দিন আগে বাড়ি ফিরেছে। ত্রানই সম্বল ছিল। কিন্তু এবার পরীক্ষার ফি স্কুল থেকে নির্ধারন করেছে ২ হাজার টাকা। দিনমুজুর বাবা এই কর্মহীন অবস্থায় এই টাকা জোগাড় করবে। তারপরও অল্প কিছু টাকা কষ্ট করে স্কুলে জমা দিয়েছে।
একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ঢেমশাখোলা গ্রামের মঞ্জু মোড়লের কন্যা প পরীক্ষার্থী বিলকিস আক্তার আকুতির সঙ্গে বলেন,বাড়িতে এখনও পানি রয়েছে। আব্বা বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছে। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে আমাদের। আমার এবার টাকার জন্য পরীক্ষা দেওয়া হতো না। মামার বাড়ি থেকে মা ২ হাজার ১ শত টাকা এনে স্কুলে জমা দিয়েছি। তাই এবার পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আরেক ছাত্রী পারভিন খাতুন বলেন, আব্বা দিন মুজুর। পরীক্ষার টাকা চেয়েছি। কিন্তু মনে হয় দিতে পারবে না। এবার আমার পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একই ধরনের বক্তব্য পরীক্ষার্থী রুমা খাতুন সহ অনেক ছাত্র-ছাত্রী’র। সকলের সরকারের কাছে এবছরের পরীক্ষার ফি মওকুফের জোর দাবী জানিয়েছে।
ঘোনা পলী মঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বানাথ ব্যানার্জি উপরোক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,বিদ্যালয়ের উন্নয়ন’র স্বার্থে এসব টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের অনেক খরচ আছে। সব মিলিয়ে এই টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ কামর“জ্জান বলেন,ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলাপ করে সংশিষ্ট প্রতিষ্টান ফি নির্ধারন করেছে। এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষক সমিতি কোন সভা করে ফি নির্ধারণ করেনি।
তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন,সরকারী ফি ছাড়া বেশি নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন,নিয়মের বাইরে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার ফি নেওয়া হবে। তেব এখনও পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড ফি মওকুফের জন্য সরকারী কোন নির্দেশনা নেই।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নাজমুল হক/সাতক্ষীরা