সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর নিয়ে ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কথিত আদেশের ফলে ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব প্রাপ্তি বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। দৈনিক কোটি টাকা রাজস্ব প্রাপ্তির এ বন্দরে এখন দৈনিক রাজস্ব আসছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীরা এনবিআর এর কথিত সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে এ বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য  হয়েছেন। ফলে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর এখন শুধু বন্ধের অফেক্ষায়। কোটি মানুষের রুটি রুজির অবলম্বন এই বন্দরে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা না থাকায় ধু ধু করছে। একই সাথে ভোমরা বন্দর বন্ধ  করতে সাতক্ষীরা বিজিবি’র কতিপয় কর্মকর্তারা জড়িত থাকার বিষয়টিও পরিস্কার করেছে কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে বন্দর অভ্যন্তরে শ্রমিকদের চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্দর রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ সভা ও সাংবাদিক সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের কথা জানানো হয়।

ভোমরা বন্দরের সাথে সংশিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভোমরা বন্দর দিয়ে আসা ৭ ট্রাক আপেল,আনার ও কমলা লেবু ছাড় করিয়ে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা ত্যাগ করে। ট্রাক গুলি বন্দর ত্যাগ করে সদরের ঝাউডাঙ্গা বাজারে পৌছালে বিজিবি’র কর্মকর্তারা আটক করে বেশি পন্য আছে এমন অভিযোগে হয়রানি করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা এম এম কামাল হোসেনের হস্তক্ষেপে বিজিবি ট্রাক গুলি ছেড়ে দিলেও খামাখা হয়রানি করা হয়েছে এমন অভিযোগ ফল আমদানি কারকদের। একই ঘটনা ঘটে ৫ নভেম্বর। বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ৪ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের ফল ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরার বাকাল এলাকায় আটক কওে বিজিবি। তারা ট্রাক গুলো বিজিবি’র হেটকোয়াটারে নিয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত পন্য না পাওয়ায় আবারও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই ১১ টি ট্রাক আটকের একদিন পর ছেড়ে দেওয়ায় কাচা পন্য হওয়ায় ব্যবাসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাচা মালের ব্যবসায়ীরা এ বন্দরে আসতে ভয় পাচ্ছে। কাষ্টমস এর ছাড়কৃত পন্য বিবিজি কর্তৃক আটকের ঘটনায় অতি উৎসাহি হওয়ার বিষয় কি এনিয়ে ভাবছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে বন্দর সংশিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, সমপ্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মৌখিক ভাবে এক আদেশে খূলনা কমিশনারের মাধ্যমে ভোমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন আমদানিকৃত পন্যবাহী ট্রাকে যতটাই পন্য থাকুক না কেন তা ১০ টন দেখিয়ে সেই পরিমান রাজস্ব আদায় করতে হবে। কোন ট্রাকে ১০ টন পন্য না থাকলেও তাকে ১০ টনের ডিউটি সরকারকে দিতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা কেউ ৫ টন, কেউ ৭ টন কেউ ১০ টন পন্য আমদানি রপ্তানি করে থাকে। ফলে ব্যবসায়ীরা ৫ টন পন্য আমদানি করে ১০ টনের ডিউটি দিতে রাজি না হওয়ায় ইতিমধ্যে ছোট ও মধ্যম শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর ছেড়ে চলে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ একটি স্বার্থন্বেষী মহলের ইন্ধনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কমিশনার অফিসের মাধ্যমে এধরনের আত্নঘাতি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে এ বন্দরের পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরে এধরনরে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি এনবিআর। পাশাপাশি অবকাঠামো গত সমস্যা তো ছিলই। এরপরও কলকাতা থেকে ঢাকার দুরত্ব ভোমরা বন্দর দিয়ে কম হওয়ার কারনে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ। এরআগে অতি অল্প শূল্কায়ন পন্য আমদানি করার অনুমতি থাকলেও বেশি শূল্কায়ন পন্য আমদানির অনুমতি ছিলনা। বর্তমানে সেটিও নেই। ফলে ভোমরা বন্দর এখন শুধু বন্ধের অফেক্ষায়। এদিকে বন্দরের অন্যান্য সুত্র জানায়, ভোমরা বন্দরে ইতিপূর্বে চাকুরি করেন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ হারুন উর রশিদ। তিনি অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় বদলি হয়ে চলে যান বরিশালে। সেখান থেকে বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমন্বয় সেলে কর্মরত আছেন। ভোমরা বন্দরে চাকরি করার সময় দূর্ণীতির পাশাপাশি গ্রুপিং করাসহ নানাবিধও ষড়যন্ত্র’র বিষয়টি ছিল বন্দর অভ্যন্তরে সকলের কাছে খুবি পরিস্কার। এখন তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমন্বয় সেলে থেকে ভোমরা বন্দর বন্ধ করার মহাষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। বন্দরের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, সাতক্ষীরা কাষ্টমস এক্সসাইজ ভ্যাট জজকোর্ট এলাকায় অবস্থিত অফিসে মাষ্টাররোলে কর্মরত কর্মচারি জনৈক গৌতম কুমার হেলা তার সিটিসেল একটি মোবাইল নাম্বারে এনবিআর এর সমন্বয় সেলের কর্মকর্তা শেখ হারুন অর রশিদকে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে আসছিল। তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঈদের আগে বিজিবি কাষ্টমসের ছাড়কৃত ১১ ট্রাক পন্য আটক করে কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও হয়রানি করে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি বন্দর সংশিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারিসহ ব্যবসায়ীরা জানতে পেরে সাতক্ষীরা ভ্যাট অফিসকে অবহিত অতপর চাপ সৃষ্টি করলে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারি কথিত সোর্স গৌতমকে ভ্যাট অফিস থেকে বিদায় করে দেন। ভোমরা বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রকারি চক্রের অন্যতম গৌতম সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সুইপার দিলিপ হেলার ছেলে। সুত্র আরও জানায়, ভোমরা বন্দর কর্তৃপক্ষ আকর্ষিক ভাবে গৌতমের কাছে এসে হাতে থাকা একটি সিটিসেল ফোন সার্চ করে ভোমরা বন্দরের দু’একজন ব্যবসায়ী, অফিস ষ্টাফ, বেনাপোল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও এনবিআর সমন্বয় সেলের কর্মকর্তাসহ বিজিবি’র দু’এক জনের নাম্বার পাওয়া যায়। ফলে বর্তমানে ভোমরা বন্দর সংশিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে ষড়যন্ত্রকারি হিসেবে গৌতমকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান। গতকাল সকালে সদর হাসপাতালের মধ্যে বসবাসকারি গৌতমের বাড়িতে যেয়ে তাকে না পেয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসমস্ত বিষয়ে ভোমরা সি এ্যাণ্ড এফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু জানান, এ বন্দরের সাথে সংশিষ্ট কোটি মানুষের রুটি রুজি হয়ে থাকে। আমরা চেষ্টা করছি বন্দরটিকে রক্ষা করার। তবে স্বাভাবিক ভাবে ব্যর্থ হলে জেলা বাসীকে নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছেন এ্যাসোসিেয়শন নেতৃবৃন্দ। বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা এম এম কামাল হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন কিছুই জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নাজমুল হক/সাতক্ষীরা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here