কেশবপুরের সাগরদাঁড়ীর মধুমেলায় যাত্রা, যাদু, বিচিত্রানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্যান্ডেলে শরীর প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা, জুয়া, মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চললেও দেখার কেউ নেই ।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির জন্মভূমি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ীতে ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা । মহাকবির পৈত্রিক ভিটা, কবির স্মৃতি বিজড়িত বিদায় ঘাট, কাঠ বাদাম গাছ, ফুলে ফুলে সজ্জিত মুধপল্লী, আর্কষনীয় কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা, ঘর সাজানোর রকমারী মৃৎশিল্প, কাঠ, বাঁশ, বেতের তৈরি কুটির শিল্প, আসবাবপত্রের ৩শতাধিক স্টলে ভীড় উপছে পড়ছে । পাশাপাশি মূলমঞ্চে মহাকবি মাইকেল মদূসূদনের সাহিত্যকর্ম নিয়ে কবি আসাদ চৌধুরী, সরকারী বিএল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সাধন রঞ্জন ঘোষসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের জ্ঞান গর্ব আলোচনা, মধুমঞ্চে বিটিবি শিল্পী শাহীন সামাদ, শিল্পী আব্দুল আলীম এর পুত্র আজগর আলীম, নকুল কুমার বিশ্বাস, বেতার শিল্পী আব্দুস সাত্তার খানসহ দেশবরেণ্য শিল্পীদের বিভিন্ন গান, যাত্রা, সার্কাস, নাগরদোলা, মৃত্যুকূপ, ভ্যারাইট শোসহ নানা মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী দর্শকরা ব্যাপক উৎসাহে উপভোগ করছে।
পাশাপাশি যাত্রা, ঢাকা মডার্ণ যাদু প্রদর্শনী, ঢাকা ডিজিটাল যাদু প্রদর্শনী ও বাংলাদেশ চলচিত্র, চলচিত্র বিষয়ক ও বিচিত্রানুষ্ঠান, অদৃশ্য ডিজিটাল যাদু, ডিজিটাল যাদু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান, চলচিত্র নায়ক নায়িকাদের সমন্বয়ে যাদু প্রদর্শনী, বিচিত্রানুষ্ঠান ও মডেল তারকাদের নৃত্য পরিবেশন ‘ভ্যারাইটি শো চলে যাবে স্মৃতি পড়ে রবে’ নামের বিভিন্ন প্রদর্শনীর প্যান্ডেলে মেয়েদের প্রায় বস্ত্রবিহীন অবস্থায় নাচানো, জুয়ার বোর্ড, মাদকের আকড়া বসিয়ে অর্থলুভী বিকৃত রুচীর কিছু ব্যক্তি মধুমেলার পরিবেশকে কলুষিত করছে। মেলা সংশ্লিষ্টদের প্রতিদিন যাত্রার দল ৫০হাজার টাকা, কথিত যাদু প্রদর্শনীর দল প্যান্ডেল প্রতি ৬ হাজার টাকা করে দিয়ে যুবতী মহিলাদের প্রায় বস্ত্রহীন অবস্থায় নাচাচ্ছে । আর এসব প্রকাশ্যে ঘটলেও হাজার হাজার টাকায় ম্যানেজ স্থানীয় প্রশাসন তা বন্ধ না করে বরং পাহারা দিচ্ছে । প্রতি রাতে থানার পাবলিক ক্যাশিয়ার খ্যাত হিরন, এরফান নামে ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে চলা মাদকের আসর, জুয়া আর আলো আধারের খেলায় প্রায় বস্ত্রহীন যুবতী মহিলাদের উত্তেজনাকর নাচের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতি বয়সী কিশোর যুবকরা নেচে-গেয়ে মাতোয়ারা হয়ে সর্বস্ব খুয়াছে । কপোতাক্ষ নদের ওপারে জনৈক চেয়ারম্যানের ছেলের নেতৃত্বে ২৩ তারিখ রাতে ওযান টেন জুয়া খেলা শুরু হয়। কর্তৃপক্ষের সাথে অদৃশ্য যোগসূত্রে গভীর রাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা জুয়াড়িদের অংশগ্রহনে জমজমাট জুয়ার আসর বসেছে। জুয়ার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটছে । ২৪ জানুয়ারি রাতে মধুমেলায় রবিউল ইসলাম (২২) নামের এক যুবক ছুরিকাঘাতে মারাত্নক জখম হয়ে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অশ্লীলতা ও জুয়ার ছবিসহ খবর সম্পর্কে থানা অফিসার-ইন-চার্জ মীর রেজাউল হোসেন রেজাকে অবহিত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি । মধুমেলা শুরু হওয়ার পর থেকে সার্কাস, যাত্রা, যাদু প্রদর্শণীর প্যান্ডেলে এসব অশ্লীল কর্মকান্ড চললেও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা দায় এড়ানোর জন্য একে অপরের ওপর দায়ীত্ব দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোঃ রেজা-উন-নবীর বলেন, আমি কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে অফিসার ইনচার্জ মীর রেজাউল হোসেন বলেন, আমি এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/জাহিদ আবেদীন বাবু/কেশবপুর