একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্যের বাকি অংশ পড়া শেষ করছে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা।

সোমবার বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রোববার দীর্ঘ ৮৮ পৃষ্ঠার সূচনা বক্তব্যের মধ্যে ৬১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে শোনানো হয়। আজ সোমবার বাকি ২৭ পৃষ্ঠা পড়া হয়। এ সময় আদালতে সাঈদী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্য শেষে সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্যের প্রথমাংশ ছিল বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত। এই অংশটি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টির অবকাশ নেই।

তবে শেষাংশে সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, এগুলোকে তিনি ‘শতাব্দির শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার’ বলে আখ্যায়িত করেন।

তাজুল অভিযোগ করে বলেন, তদন্তকারীরা মিথ্যার পাহাড় গড়েছে। রাজনৈতিক অনুভূতি নিয়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ করে এই অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। পুলিশ প্রহরায় সাক্ষীদের কাছ থেকে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।

আইনিভাবে এই মিথ্যাচারের জবাব দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

আইনজীবীদের পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি অভিযোগ করে তাজুল আরো জানান, রাষ্ট্রপক্ষের তদন্ত কাজের জন্য দেড় বছর সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবীদের মাত্র ছয় সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত সাঈদী ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সাথে মিলে খুন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।

পাক সৈন্য ও রাজাকারদের পিরোজপুরের মধুসদনের স্ত্রী শেফালি ঘরানিকে গণধর্ষণ করতে সাহায্য করেন সাঈদী। পরবর্তীতে শেফালির মেয়ে হয়। শেফালি আত্মরক্ষার্থে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

প্রসিকিউটররা জানান, সাঈদী ১৯৭১ সালে হিন্দুদের ওপর চরমভাবে অত্যাচার করেছেন। দোকান-পাট লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্নভাবে হিন্দুদের অত্যাচার করেছেন তিনি। শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সাথে মিলে হিন্দুদের ওপর সাঈদী এই অত্যাচার চালায়।

তারা আরো জানান, নিজের এই অপরাধ আড়াল করতে সাঈদী যশোরের ভাগাড় পাড়ায় আত্মগোপন করে থাকেন। কিছুদিন সেখানে তার পূর্বঘটনা প্রকাশ পেলে তিনি আবার সেখান থেকে পালিয়ে যান। ১৯৮৬ আবার পিরোজপুরে এসে ভুয়া মওলানা হিসেবে ওয়াজ শুরু করেন।

তারা জানায়, সাঈদী সরাসরি পিরোজপুরের পাড়ের হাটে ভানু সাহার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং এক পর্যাযে ভানু সাহাকে একটি হিন্দু বাড়িতে আটকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করেন।

আগামী ৭ ডিসেম্বর এই মামলায় ট্রাইব্যুনালে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।

গতকাল রোববার সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। প্রথম দিনে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয় এবং সোমবার এই বক্তব্য শেষ হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ ২০টি অপরাধের অভিযোগ গঠন করে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গণহত্যা, লুট এবং ধর্ষণে সহায়তা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম সাঈদীর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here