সমকালের ফরিদপুর ব্যূরোপ্রধান, নির্ভীক সাংবাদিক গৌতম দাসের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। দিবসটি উপলক্ষে ফরিদপুরের সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচী পালন করছে। এদিকে গৌতম দাস হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকলেও পাঁচ বছরেও রায় হয়নি এই মামলার।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় ফরিদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে গৌতমদাসের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে মুজিব সড়কে মানবন্ধন কর্মসূচী পালন করবে সুহৃদ সমাবেশ। বেলা সাড়ে ১১ টায় সাংবাদিক সমিতি মিলনায়তনে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে সমকাল পরিবারের পক্ষ থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় গৌতম দাসের গ্রামের বাড়ী চন্ডিদাসদীতে তার সমাধীতে পুস্পমাল্য অর্পন করা হবে। সন্ধ্যায় গৌতম দাসের স্মরণে সভা আয়োজন করেছে ফরিদপুর প্রেস ক্লাব।
এদিকে হত্যাকান্ডের ছয় বছর অতিক্রান- হলেও চিহ্নিত হলেও এখনও পর্যন- খুনিদের বিচার হয়নি। সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলাটি চাঞ্চল্যকর বিবেচনা করে ২০০৬ সালের ২৮ আগষ্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স’ানান-র করা হয়। তার পর থেকে মামলাটি কয়েকদফা আইনী জটিলতার কবলে পড়ে এর কার্যক্রম স’গিত অবস’ায় থাকে। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুলাল-১ আদালতের বিচারক শাহেদ নূরুদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটি বর্তমানে আসামী পক্ষের যুক্তি তর্ক উপস’াপন পর্যায়ে রয়েছে। গতকাল বুধবার মামলার তারিখে আদালত ৪ জন সাক্ষীর ব্যাপারে যুক্তির্তক উপস’াপন গ্রহণ শেষে আগামী ২৭ নভেম্বর পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী স্পেশাল পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জানান, যুক্তির্তক উপস’াপন পর্ব শেষ হবার পরই মামলার রায় ঘোষণা করবেন আদালত। আদালতে আসামী পক্ষে যুক্তির্তক উপস’াপন করছেন তাদের আইনজীবী টিএম আকবর।
উল্লেখ্য ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়কের সংস্কার ও পুনঃনির্মান কাজের অনিয়ম ও দূর্নীতির সংবাদ পরিবেশন করায় সাংবাদিক গৌতম দাসের উপর ক্ষদ্ধ হয় সড়কের ঠিকাদার ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীচক্র। ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর ভোরে চিহ্নিত সনা্ত্রসীরা সমকালের ফরিদপুর ব্যূরো অফিসে ঢুকে সাংবাদিক গৌতমকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওইদিনই সমকাল পত্রিকার পক্ষে বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। দুইমাস পর ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারী ফরিদপুরের আদালতে ১০ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন-কারী কর্মকর্তা গোলাম নবী। আসামী আসিফ ইমরান, আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কাজী মুরাদ, কামরুল ইসলাম আপন, সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, রাজিব হোসেন মনা, আসাদ বিন কাজী, এ্যাপোল বিশ্বাস ও তামজিদ হোসেন বাবু গৌতম দাস হত্যাকান্ডের পর থেকে বিভিন্ন সময় পুলিশ অথবা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। অপর একজন আসামী জাহিদ পলাতক অবস’ায় মারা যায়। বর্তমানে ৯ আসামীর সকলেই জামিনে রয়েছে। আসামী আসাদ, এ্যাপলো ও বাবু হত্যাকান্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত অকাল প্রয়াত পুত্রের শোকে এবং পুত্র হত্যার বিচার না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন গৌতম দাসের মা ও বাবা। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মা সতী রানী দাস এবং ২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর বাবা বলরাম দাস পরলোক গমন করেন। ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির কার্যক্রমের উপর স’গিতাদেশ দেন। তার পর থেকে গত ৫ বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে মামলাটির কার্যক্রমের উপর দফায় দফায় স’গিতাদেশ জারি করেন হাইকোর্ট। ফলে ৫ বছরের মধ্যে পুরো তিনবছরই বন্ধ ছিল বিচারিক কার্যক্রম। দীর্ঘসূত্রিতার কবলে পরে সাংবাদিক গৌতম হত্যার বিচার প্রার্থীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গৌতমের পরিবারের সদস্য ও ফরিদপুরের সাংবাদিক ও সচেতন মহল। মামলার ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং বাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস’াপন ১ বছর আগে সম্পন্ন হবার পরও নানা অজুহাতে মামলাটির কার্যক্রম বিলম্বিত করে চলেছে আসামী পক্ষ।
বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর