কলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: নামেই প্রথম শ্রেণী পৌরসভা পাবনার সাঁথিয়া। র্দীঘদিন বেতন বন্ধ কর্মচারিদের। সড়কে নেই বাতি। ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা গায়েব! যানবাহন আছে ভাড়া খাটে অথচ তহবিলে টাকা জমা নেই। বেহাল দশা রাস্তাঘাটের।

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী (সাবেক রাষ্ট্রপতি) মো. জিল্লুর রহমান সাঁথিয়া পৌরসভার উদ্বোধন করেন।
১৯ টি মৌজা, ২৭টি গ্রাম, ২৫ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা সাঁথিয়া পৌর এলাকা। ৫৩ হাজার ৮’শ ৮৫ জন মানুষের বসবাস পৌর এলাকায়। গ্রামীণ পরিবেশের এই প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় রাতে অনেক সড়কে বাতি জ্বলে না। যদিও খাতাপত্রে (নথিপত্রে) দেখানো হয়েছে পৌরসভা এলাকার ১০ কিলোমিটার সড়কে বাতি আছে। পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার পরিমাণ ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪’শ ৯৩ টাকা।

বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক বলেন, বকেয়ার পরিমাণ সাঁথিয়া পৌরসভার সবচেয়ে বেশি। সরকারী অফিস গুলো বকেয়া বিদ্যুৎ বিল জুন মাসের আগেই পরিশোধ করে দেয়। কিন্তু পৌরসভা কোন প্রকার বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি। আমারা বিল পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নর ব্যাপারে স্বিধান্ত গ্রহন করা হবে।

৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি গত ৪১ মাস বেতন পান না। মাস্টার রোলে কর্মরত ১০ জন কর্মচারিরও একই অবস্থা। নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন নিয়মিত অফিস করেন না। থাকেন না সাঁথিয়ায়। সচিবের পদ শূন্য প্রায় দুই বছর যবত।

২০০৬ সালে জনতা ব্যাংক বেড়া শাখায় ফিক্সড ডিপোজিট ছিল ৫৫ লাখ টাকা। এই টাকা ট্রান্সফার করে নিয়ে আসা হয় সাঁথিয়া সোনালী ব্যাংকে। সেই টাকা গায়েব হয়ে গেছে বা খরচ হয়ে গেছে! কেন কি কারণে এই ফিক্সড ডিপোজিটের অর্থ খরচ করা হলো? এ ব্যাপারে দুদকের তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

পৌরসভায় রাজস্ব খাতে আয় বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু এই রাজস্বের আয়কৃত টাকা যথাযথভাবে জমা এবং খরচ হয় না এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ৪টি ট্রাক আছে। আছে ২টি রোলার মেশিন, একটি সার্ভিস ট্রাক এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স।

এসব যানবাহন ভাড়া বাবদ যে আয় হয় তার কোন হদিস নেই বা তহবিলে কোন অর্থ জমা নেই। ট্রাকগুলো বালু-ইট পরিবহনে ভাড়া খাটে। অথচ এসব ট্রাকের ভাড়া পৌরসভার তহবিলে জমা হয় না। প্রতিটি ট্রাক ভাড়া দেয়া হয় মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। এই হিসাবে ৪টি ট্রাকের ভাড়া বাবদ আয় হওয়ার কথা বছরে ৩০ লাখ টাকা। রোলার এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকাও জমা হয় না। অটো রিক্সা ও ভ্যানের লাইসেন্স পৌরসভা থেকে প্রদান করা হয় না। যদিও পৌরসভা এলাকায় প্রতিদিন এসব যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এই আদায়কৃত টাকা কার পকেটে যায় সেটা জানেনা কেউ।

বোয়াইলমারী বাজারে ‘বঙ্গবন্ধু মার্কেট’ নির্মান করা হয়েছে খাস জমিতে। মার্কেটের প্রতিটি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায়। এই টাকা কোন খাতে জমা হয়েছে তারও কোন হদিস নেই। একই অবস্থা বালিকা বিদ্যালয়ের দক্ষিণের তাঁতী বাজারের। পৌরসভার সামনের তিনটি দোকান ভাড়া বা লীজ গ্রদান করা হয়েছে কিভাবে কত টাকায় তারও কোন স্বচ্ছতা নেই।

পৌর এলাকার অধিকাংশ সড়কগুলোই চলাচলের অনুপোযোগী। পৌর এলাকার মধ্যে পাকা সড়ক ৩৮ দশমিক শূন্য ২ কিলোমিটার। হেরিন বন বন্ড সড়ক ১২ কিলোমিটার। কাঁচা সড়ক ৪৯ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। একই সড়ক বারংবার মেরামত দেখিয়ে টাকা খরচ দেখানোর অভিযোগও আছে। পৌর এলাকায় সম্প্রতি ৪০ টি তারা নলকূপ স্থাপন করার প্রকল্পেও নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে।

বার্ষিক উন্নয়ন খাতে (এডিপি) সরকার ২০১৯-’২০ প্রদান করেছে ৮৫ লাখ টাকা। ১০ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তার ৯টির টেন্ডার হয়েছে। এইসব কাজের খতিয়ান পাওয়া যায়নি। পৌরসভার কয়েকজন কর্মচারির সঙ্গে কথা বলে তাদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও গতমাসে (আগস্ট) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক কর্তৃক অডিট রিপোর্টে এর সত্যতা মিলেছে। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া পৌর মেয়র মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here