সরি নাজনীন আপু, আজ মুকুল ভাইয়ের পাশেও আছিএম জহিরুল ইসলাম :: চন্দ্রমূখীর ‘মৃত্যু’র কয়েকদিন পর এক সাংবাদিক সহকর্মীর কাছে শুনলাম জিটিভি’র বার্তা সম্পাদক মুকুল ভাই আবার ‘বিয়ে’ করেছেন। কষ্ট পেলাম। তাই একদিন চন্দ্রমূখীকে নিয়ে মুকুল ভাইর আবেগী এক স্ট্যাটাসে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, চন্দ্রমূখীকে নিয়ে লেখার অধিকার নিয়ে। এ বিষয়ে তখন মুকুল ভাইর কয়েকজন ‘অনুসারী’ আমায় সেই স্ট্যাটাসে ব্যক্তিগত আক্রমন করেছিলেন। আজ সেই মুকুল ভাই তার প্রথম ‘স্ত্রী নির্যাতন’র মামলায় জেল হেফাজতে আছেন। অনেকে আজ মুকুল ভাইকে ছেড়ে গেলেও আমি তার সঙ্গে আছি।

বলতে পারেন, কেনো আমি একজন ‘নির্যাতনকারী’র পাশে দাড়িয়েছি? প্রথম কারন, মুকুল ভাই এখনো নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত, এখনো তার অভিযোগ আদালতে প্রমানিতো হয়নি। তাই কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিতো হওয়ার আগে আমি তার পাশ থেকে সরে যেতে পারি না। দ্বিতীয় কারন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমি সমর্থন করি না। আর মুকুল ভাই’র বিষয়টিতে মোটেই না।

কেননা, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিতো হওয়ার আগে, বা অভিযোগ প্রমানিতো হলেও তিনি বাচ্চু রাজাকারের মতো করে দেশ থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতেন না। এটা তার সামাজিক অবস্থানের কারনেই সম্ভব হতো না।

নাজনীন আপু’র অন্যতম একটি অভিযোগ, ‘প্রেমিকা, বা দ্বিতীয় স্ত্রীকে মুঠোফোনের অপরপ্রান্তে হোল্ডে রেখে মুকুল ভাই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মানসিক নির্যাতন করতেন।’ এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ। মুকুল ভাই এমনটা করে থাকলে আমি এর চরম নিন্দা জানাই। এমনকি ওনার পাশ থেকে আমিও চলে যাবো। কিন্তু তার আগে এটা প্রমানিতো হওয়া দরকার। নাজনীন আপুও সাংবাদিক। তার পক্ষে এ বিষয়টা প্রমান করা মোটেও কষ্টসাধ্য, বা অসম্ভব না।

কারন, যেদিন এমনটা ঘটেছিলো দু’জনের সেদিনের কললিষ্ট বের করলেই এটার প্রমান হয়ে যায়। এটা এজন্যই বলছি, আমার দেখা নারী নির্যাতনের মামলার প্রায় ৭০ শতাংশই মিথ্যা দিয়ে সাজানো হয়। দাম্পত্য জীবনের একটুখানি মনোমালিন্য, কলহ হলেই স্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্যাতনের মামলা দেয়া হয়! পুরুষরা জেল হাজতে বন্দী থাকায় আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগটা স্বাভাবিকভাবেই কম পান।

তখন স্ত্রী, বা তার পরিবার যেভাবে শর্ত দেয় পুরুষরা সেই শর্ত মেনে হলেও জেলখানা থেকে মুক্ত হতে চান। আর এতেই ওই মামলা প্রমানিতো হয়ে যায়! এতে পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর উগ্রতা বাড়ে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে হলেও অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্ত না করে গ্রেপ্তারের এ সিস্টেমটার ব্যপারে নতুন করে আদালতের ভাবা উচিৎ। তবে এর ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়।

আরেকটা বিষয় হলো, এখানে আমি এক পক্ষ বা শুধু নাজনীন আপুর বক্তব্যই শুনছি, মুকুল ভাইয়েরটা না। একপক্ষের বক্তব্য শুনে যারা কাউকে ছেড়ে যাওয়ার, বা পাশে না থাকার সিদ্ধান্ত নেন তারা নিজেরাই তাদের ব্যপারে ভালো জানেন। আমি সেদিকে না গেলেও একপক্ষের বক্তব্য শুনে মুকুল ভাইকে ছেড়ে যেতে পারছি না।

একজন মানুষ কার সঙ্গে দাম্পত্যজীবন কাটাবেন, এটা নিতান্তই তার ব্যপার। এটা ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যেও পড়ে। তাই কারো ভালো না লাগলে সবধরনের ‘লিগ্যাল দেনা, পাওনা’ চুকিয়ে আপনারা ভিন্নভাবে জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা আপনারা কেউই করেননি। কেউ যখন দ্বিতীয় বিয়ে করে, বা অন্য নারী, পুরুষে আসক্ত হয়, তখন তার সঙ্গে সংসার টিকিয়ে রাখা, টেকানোর চেষ্টা, সেখানে থেকে ‘নির্যাতিতো’ হওয়া সুস্থতার লক্ষণ না।

তখন তার সঙ্গে ডিভোর্সের আবেদন না করে আপনি এখন ‘নির্যাতন’র মামলা করেছেন, এটা আমি সমর্থন করি না। এটা আমার কাছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতো মনে হয়! মুকুল ভাইর জায়গায় আপনি, বা যে কেউ থাকলে আমার অবস্থান একই হতো। আর আপনাদের এ ঘটনার পর নারীবাদের নামে কিছু আপনার কিছু বন্ধু অনলাইনে ‘স্ম্প্রদায়িকতা’ ছড়াচ্ছে।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখুন, নিজের বাসায় শ্বাশুড়ী, ননদ বা কাজের মেয়ে নামের কোনো নারীকে প্রতিদিন নির্যাতন করছেন। যার কারনে সংসারে নিত্য কলহ লেগেই থাকে! আর আদালতে বিচারাধীন কোনো বিষয়ে এতোটা সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোও ঠিক না, এটা তারা যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই মঙ্গল।

সরি, নাজনীন আপু। প্রথম দিন শুধু আপনার হয়ে মুকুল ভাইকে চ্যালেঞ্জ করলেও আজ পুরোপুরি আপনার পক্ষে থাকতে পারলাম না। মুকুল ভাই এখন নির্যাতিত হওয়ায় তার পক্ষেও থাকলাম।

লেখক: সহকারী সম্পাদক, দি বাংলাদেশ টুডে। ইমেইল: m.jahir@live.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here