বাংলাদেশের সরকার ২০১১ সালে নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন এবং বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়নি এবং সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনার ক্ষেত্রে তাদের অসহিষ্ণুতাও বাড়তে দেখা গেছে। খবর : বিবিসি

বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বার্ষিক প্রাতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০১২’তে বাংলাদেশের বিষয়ে এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশটিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় চলমান বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের সরকার ।

রোববার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ৯০টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

যদিও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন ৠাবের হাতে মানুষ হত্যার ঘটনা কমেছে, কিন্তু নিখোঁজ বা গুম হওয়ার ঘটনার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

এর ফলে নিরাপত্তাবাহিনী এক্ষেত্রে তাদের ধরন বদলে ফেলেছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস বিডিআরের সদস্যদের হাতে সেনাসদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় আটক হওয়া হাজার হাজার বিডিআর সদস্যের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারও লঙ্ঘন করেছে সরকার।

বিভিন্ন সময় হামলার শিকার হওয়ায় মানবাধিকার সংগঠন, সাংবাদিক, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং নাগরিক আন্দোলনের বহু লোকজন নিরাপত্তহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা ৠাবের কাছ থেকে অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর মধ্যেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুসারে, ২০০৪ সাল থেকে অন্তত এক হাজার ৬শ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন।

বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে র‍্যাবের দায়-দায়িত্বের বিষয়ে সুনির্দ্দিষ্ট ও জোরালো প্রমাণাদি থাকার পরেও এখনো পর্যন্ত সরকার কোনো র‍্যাব সদস্যকে জবাবদিহিতার জন্য আটক করেনি বলেও উল্লেখ করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস ।

মিস্টার অ্যাডামস বলেন, রাছোঁয়ার বাইরে। শেখ হাসিনার সরকার নির্যাতন বন্ধের এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিরাপত্তাবাহিনীর সেই সদস্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নাগরিক সমাজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পদক্ষেপ নিলে তাদের নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়।

এক্ষেত্রে ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন-অধিকাররের সদস্যদের নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় বলে উল্লেখ করা হয়।

দ্য এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলছে, তাদের প্রতিনিধি উইলিয়াম গোমেযজকে গত মে মাসে সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা অপহরণ করার পর নির্যাতন করা হয়।

এছাড়া নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সমর্থকদেরও হুমকি দেয়া হয়, এমনকি একটি ঘটনায় নির্যাতনের শিকারও হতে হয় যা তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের আইনটি ঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়নি।

এটি এখনো আন্তর্জাতিক মাপকাঠি অনুপাতে পিছিয়ে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নিরপক্ষেতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

আন্তর্জাতিক মাপকাঠি অনুসারে এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হলে এখনো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে, বলছেন অ্যাডাম স্মিথ।

তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নারী অধিকারের ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এক্ষেত্রে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান মিনাক্ষী গাঙ্গুলী বিবিসিকে বলেন, “অধিকারসহ যেসব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছে বা কাজ করেছে তারা এনজিও ব্যুরো থেকে অনেক বেশি প্রশ্নের শিকার হচ্ছে।

তাদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে এবং নির্যাতনের ব্যাপারে সরকার তদন্তের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না”।

তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু সরকার তাদের কাজের ও সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা না করে উল্টো হেনস্থা করেছে”।

যেসব সংগঠনকে কড়া নজরদারির মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে ‘অধিকার’এর নাম উল্লেখ করেন মিনাক্ষী গাঙ্গলী।

এক্ষেত্রে অধিকার-এর রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এবং সেটাই তাদের ওপর বাড়তি চাপ বয়ে আনছে কিনা অথবা একটি মানবাধিকার সংগঠন এর রাজনৈতিক সংশ্লিস্টতা থাকা তার কাজের আপোষহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিনা সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, “অনেক মানবাধিকার সংগঠনেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকে, সারা পৃথিবীতেই এধরনের নজির আছে।

অধিকারকে তাদের কাজ দিয়েই যাচাই করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তাদের কাজে কোনো প্রভাব ফেলছে না বলেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে”।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নিউজ ডেস্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here