নতুন বছরে পদার্পণের মধ্য দিয়ে আর্থিক মন্দার টানা পঞ্চম বছরে পা রাখতে চলেছে গ্রিস। ইতিমধ্যে মন্দা আরো বেড়েছে। বেড়েছে বেকারত্ব। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক আকার ধারণ করেছে যে অনেক বাবা-মা বাধ্য হয়ে সন্তানদেরও ত্যাগ করছে।

শিশুদের সেবাদানকারী এথেন্সভিত্তিক সংস্থা ‘দ্য স্মাইল অব দ্য চাইল্ড’ জানিয়েছে, তাদের দুই তলা ভবনের সবটা জুড়ে রাখা শিশুদের খাটগুলো ভরে গেছে। তাতে ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে পরিত্যক্ত শিশুর, ভাঙাচোরা কোনো ভবনে ফেলে রাখা শিশু অথবা আর্থিকভাবে অসচ্ছল বাবা-মার কাছ থেকে নিয়ে আসা শিশুদের। ১৬ বছরের এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কোস্তাস ইয়ান্নোপোলস জানায়, ‘পরিস্থিতি অত্যধিক খারাপ করে তুলেছে আর্থিক সংকট। ‘মানুষের মধ্যে মদ্যপান, মাদকাসক্তিসহ মানসিক সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। রাস্তায় রাস্তায় অনেকেই সন্তান ফেলে রেখে যাচ্ছে।’

তবে মন্দার আগেও আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংসার চালাতে অনেকেই হিমশিম খেতো। দিমিত্রিস গ্যাসপারিনাতোস ও ক্রিস্তিনা দম্পতি তাদের ছয় ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে রীতিমতো ‘সংগ্রাম’ চালিয়ে যাচ্ছে। ধারকর্জে ডুবে গেছে। দোকানপাট থেকেও বাকিতে পণ্য নিতে হয় ওদের। পশ্চিম এথেন্সের পাত্রাস এলাকার ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টের মেঝেতে তোষক বিছিয়ে থাকে। বেশ কয়েক মাসের ভাড়া দিতে পারেনি এ দম্পতি। এ অবস্থায় কিছু একটা করা দরকার মনে করে ক্রিমমাসের আগে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে দেখভালের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে তাঁরা। ৪২ বছরের গ্যাসপারিনাতোস জানায়, ‘আর্থিক সংকট আমাদের মেরে ফেলেছে। আমি ব্যাপারটি বলতে খুবই লজ্জা পাচ্ছি। তবে পরিস্থিতি এমনও দাঁড়িয়েছিল যে দুই ইউরো দিয়ে একটা রুটি কেনার সামর্থ্যও আমার ছিল না।’ প্রতি মাসে ৯৬০ ইউরো বেতনের বাইরে প্রতি দুই মাস অন্তর ৪০ ইউরো রাষ্ট্রীয় কল্যাণমূলক ভাতা পায় তাঁরা।

ক্রিস্তিনা বলেছে, ‘আমরা কখনোই সংসারটাকে ভেঙে ফেলতে চাইনি। তবে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের চার সন্তানকে কোনো প্রতিষ্ঠানে তিন/চার বছরের জন্য পাঠিয়ে দিই, ততদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’ ৩৭ বছরের ক্রিস্তিনা স্থানীয় টাউন হলে গিয়ে তাদের সন্তাদের ‘বাঁচানোর’ আর্জি জানায়। স্থানীয় ডেপুটি মেয়র থিওহারিস মাসারাস বলেছে, ‘সত্যিই সেদিন ক্রিস্তিনাকে বড় বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল।’

সামাজিক কল্যাণবিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক মাসারাস জানায়, ‘সাহায্যের আবেদন বেড়েছে। গত বছর ক্রিসমাসের সময় পাত্রাসে আমরা ৪০০ পরিবারের জন্য খাদ্য পাঠিয়েছিলাম। এ বছর ১২০০ পরিবার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।’

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here