মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::

খুলনার পাইকগাছায় সাদা সাদা ফুলে এখন ভরে গেছে সজিনা গাছ। ডালের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত সাদা পুষ্প মঞ্জুরী। শীত মৌসুম শেষে সজিনার পাতা ঝরে পড়ে। পাতা শুন্য ডালে থোকা-থোকা সাদা ফুল শোভা পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২৫হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫হাজার ৫শত সজিনার গাছ আছে। প্রতি বাড়িতে কমপক্ষে দুই একটি গাছ রয়েছে।

এসব গাছ বাড়ির পাশে ও ক্ষেতের আইলে লাগানো। যত্ন ছাড়াই বেড়ে উঠেছে। গাছে ফলনও ভালো। প্রতিবছর সজিনার শাখা বা ডাল রোপণ করা হয়। রোপণকৃত ডালের প্রায় ৩০ শতাংশ মারা যায়। দেশে ২টি জাত আছে, একটি সজিনা ও আর একটি নজিনা। সজিনার ফুল আসে জানুয়ারি মাসে আর নজিনা ফুল আসে মার্চ মাস থেকে। তবে সব ফুল থেকে ফল হয় না। একটি থোকায় সর্বাধিক ১৫০টি মত ফুল ধরে। ফুল ৪০ সে.মি. থেকে ৮০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ফুটার ২মাস পর ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। একটি বড় গাছে ৪ থেকে ৫শ ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০-৪০টি বীজ হয়। দেশে সাধারণত ডাল কেটে ডাল রোপণ করে সজিনা গাছ লাগানো হয়। ভারত থেকে হাইব্রিড সজিনার জাত এদেশে এসেছে।

এ জাতের বীজ বপন করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজিনা গাছে দু’বার ফুল আসে। ফেবব্রুয়ারী-মার্চ ও জুন-জুলাই মাসে। গত বছর উপজেলায় ২১হাজার সজিনার ডাল রোপণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭ হাজার ডাল জীবিত রয়েছে। সজিনার মৌসুম শেষে এ বছরও ডাল রোপণ করা হবে। সজিনা চাষিরা উচ্চ মূল্য পাওয়ায় সজিনার ডাল রোপণ করতে উৎসাহিত হচ্ছে। বসতবাড়ির আশে-পাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজিনা গাছ যত্ন ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজিনা পুষ্টি ও ভেজষ গুনে ভরা সবজি হিসাবে খুব দামী। সজিনার ব্যাপক চাহিদা ও উচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা এখন পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে সজিনা গাছ লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে। সজিনা বিশ্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি গাছ।
অলৌকিক গাছ হিসাবে সজিনা পরিচিত। ইংরেজিতে সজিনার নাম “ড্রামস্ট্রিক” যার অর্থ ঢোলের লাঠি। নামটি অদ্ভুত হলেও এটি এমটি অতিপ্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টি গুন অনেক বেশী। অনেক গুন থাকায়, এ গাছকে যাদুর গাছ বলা হয়। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভত্তা করে ও বড়া ভেজে খাওয়া যায়। ফল সবজির মত রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়। সজিনার পাতা, ফল, ফুল, বীজ, ছাল, মুলের ভেজষ গুনও আছে।
তাই সজিনা গাছের বিভিন্ন অংশ ভেজষ চিকিৎসায় কাজে লাগে। সজিনার পাতার পুষ্টিগুন বেশী, যেভাবে খাওয়া হোক না কেন তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে, আর ওষধীগুন তো আছেই। সজিনার পাতায় যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে তা অনেক পুষ্টিকর খাবারেও নেই। যেমন, ডিমের চেয়ে বেশী আমিষ, দুধের চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, কমলার চেয়ে বেশী ভিটামিন সি, কলার চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, গাজরের চেয়ে বেশী ভিটামিন এ আছে। তাছাড়া সজিনার পাতা গুড়ো করে খাওয়ায় অন্তত ১৬টি উপকারী কথা জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চোখ ও মস্তিস্কের পুষ্টি যোগায় প্রভৃতি। সজিনা সবজি যেমন উপদেয় এর ভেজষ গুনও অসাধারণ। মৌসুমী নানা রোগব্যাধী নিরাময় ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে জন্ডিস, বসন্ত, বহুমূত্র সমস্যা প্রাচীনকাল থেকে সজিনার নানা ব্যবহার করে আসছে ইউনিয়ানী ও আয়ুর্বৈদিক চিকিৎসকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঠান্ডা-গরম, লবণ, খরা সহিষ্ণু এ গাছ বাংলাদেশের সর্বত্রই জন্মায়। উপজেলার লবণাক্ত মাটিতে সজিনা আবাদ ভাল হচ্ছে। উপজেলায় গ্রামের প্রতি বাড়ীতে কমবেশি ৫-৬টি করে সজিনা গাছ আছে। এ বছর সজিনা গাছে ব্যাপক ফুল ধরেছে। বড় ধরণের দুর্যোগ না হলে সজিনার বাম্পার ফলন আশা করা যায়। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here