স্টাফ রিপোর্টার : : অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দণ্ডাদেশ দেখে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার মহোদয়। তবে তার আগে রায়ের কপিসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংসদ কর্তৃপক্ষের কাছে আসতে হবে।

তবে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। তিনি বলেছেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। চূড়ান্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাজী সেলিমের এমপি পদ বাতিল হবে না।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানা যায়, কোনো সদস্য দণ্ডিত হলে রায়ের কপি যেমন সংসদে আসতে হবে, তেমনি ওই সদস্য যদি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সেটার নথিও আসতে হবে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে যদি রায় স্থগিত হয় সেটাও জানাতে হবে।

হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল থাকায় তিনি সাংবিধানিকভাবে সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বিকেলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল থাকার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

খুরশিদ আলম খান বলেন, সংবিধানের ৬৬ (২ এর ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে যদি কেউ নৈতিক স্খলনের দায়ে দুই বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন তাহলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে অযোগ্য হবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, হাজী সেলিম যেহেতু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাই এটা তার নৈতিক স্খলন হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার সংসদ সদস্য পদ বাদ হয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার। হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পর দুদকের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।

রায়ের বিষয়ে খুরশিদ আলম খান বলেন, দুদক আইনে (২৬-এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় হাজী সেলিমকে তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, দুদক এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা অনুসারে হাজী সেলিমকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে বিচারিক আদালত ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ওই সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারিক আদালত যেদিন হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাবে সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলা হয়েছে। যেসব সম্পত্তি নিয়ে এ সাজা প্রদান করা হয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here