নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি ::

স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে জিবীকার তাগিদে এখন অনেক তরুণ প্রবাসী। আশেপাশের অনেকের মতোই ভাগ্য বদলাতে সৌদি আরবে পাড়ি জমান নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজার প্রামাণিকের ছেলে রমজান আলী (৩৩) ও বিষা ইউনিয়নের উদয়পুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত রহমান সরদারের ছেলে আব্দুল বারেক সরদার (৪৫)।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সৌদি আরবের একটি আসবাবপত্রের কারখানায় অগ্নিকান্ডে দুজনই নিহত হন। সংসারে সচ্ছলতা আনতে চার বছর আগে ঋণ করে সৌদি পাড়ি জমান রমজান আলী। ৯ বছর আগে তার বাবা মারা যান। তারা দুই ভাই ও এক বোন। ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় রমজান।

সবার ছোট ভাই ইমরান। তিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে পাড়ি জমিয়েছেন। আর রমজানের স্বামী পরিত্যক্তা বোন তার শিশু সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে থাকেন। সংসারের সব খরচ রমজান বহন করতেন। কিন্তু শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে রিয়াদ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে হুফুফ শহরের একটি সোফা তৈরির কারখানায় আকস্মিক আগুন লাগে। এতে কারখানাটির ভেতর আটকা পড়ে রমজান আলী ও আব্দুল বারেক সরদারসহ ৯ জন শ্রমিক নিহত হন। তাদের মধ্যে সাতজনই বাংলাদেশি।

রমজানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। প্রতিবেশীরা তাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রান্নাঘরে চুলার ওপর হাড়ি বসানো আছে। রান্নার উপকরণ চুলার পাশে পড়ে আছে। তবে রান্না হয়নি। রমজানের শোকে সবাই কাতর। স্বজনরা রমজানের মাকে ঘিরে বসে আছেন।

রমজান আলীর মা রহিমা বেগম বলেন, দুইদিন আগেও ভিডিও কলে ছেলের (রমজান) সঙ্গে কথা হয়। ইটের ভাটায় গিয়ে ভিডিও কলে তাকে ইট দেখাই। নতুন বাড়ি তৈরির জন্য ওই ইট কেনার কথা ছিল। বাড়ির কিছু কাজ মাত্র শুরু করা হয়েছে। ছেলের ব্যস্ততার কারণে আর কথা বলা হয়নি।

তিনি বলেন, শুক্রবারের ঘটনা হলেও শনিবার সকালে ছেলে আগুনে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। কেউ আমাকে খবরটা দেয়নি। তবে অনেকে জানতো। বেলা ১১টার দিকে খবর পাই। ছেলে বাড়ি করবে বলে অন্য কোনো কাজে টাকা খরচ করেনি। বিয়ে করে নতুন বাড়িতে ছেলের থাকার কথা ছিল। কিন্তু আর হলো না। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

নিহত রমজানের ফুফা আব্দুস সাত্তার বলেন, তার বাবা ৯ বছর আগে মারা গেছে। এরপর তাদের সংসার অনেক কষ্ট করে চলতো। চার বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করে সৌদি গিয়ে আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করতো রমজান। সে পুরো সংসারের খরচ বহন করতো। এখনো অনেক টাকা ঋণ হয়ে আছে। এরমধ্য এ দুর্ঘটনা ঘটলো। রমজান মারা যাওয়ায় সংসার এখন অচল হয়ে যাবে। সরকারে কাছে দাবি, ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ মরদেহ দ্রুত দেশে যেন নিয়ে আসা হয়।

এদিকে, সংসারে সচ্ছলতা আনতে ১২ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান আব্দুল বারেক সরদার। দুই বছর আগে স্ট্রোক করে অচল হয়ে যান তিনি। দীর্ঘ দেড় বছর চিকিৎসা শেষে পুনরায় সৌদি আরবের ওই সোফা কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু অগ্নিকান্ডে নিহত হন বারেকও।

নিহত বারেকের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, সবশেষ গত ২০২০ সালে ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আবারো যান সৌদি আরব। তার দুই মেয়ে আছে। সৌদি আরবে আমাদের এক ভাই এবং ভাতিজা থাকে। তারাই বারেকের মৃত্যুর ঘটনা আমাদের জানায়। ওই পরিবারের বারেক ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এভাবে তার চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছি না। বড় মেয়েটার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক মেয়েকে নিয়ে বারেকের স্ত্রী বাড়িতে থাকে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে অগ্নিকান্ডে আমাদের উপজেলার দুইজন মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। তাদের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here