নিজস্ব প্রতিবেদক।

ঢাকা: আজ জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫-এর এই কালো দিনটিতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

shok-696x228পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে শহীদ হন ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনে। নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও দশ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। তবে প্রবাসে থাকায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

মধ্য আগস্টের সেই হত্যাকাণ্ডে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগি্নপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কমকর্তা ও কর্মচারী। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এই শহীদদেরও।

15-August

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণীতে ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতির জনক ও তার পরিবারের সদস্যদের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ সারাদেশে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিবসটি পালনে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে। সেখানে বিশেষ মোনাজাত ও কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সদস্য ও অন্য শহীদদের কবরে এবং সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এ সময় ফাতেহা পাঠ ও সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদানসহ বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর সারাদেশের সব মসজিদে জাতির জনক ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা ছাড়াও দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সরকারি-বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলো শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ ছাড়া পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দিবসটি পালনে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে।

এবার জাতির জনকের শাহাদাতের ৪১ বছরপূর্তি হওয়ায় আওয়ামী লীগ দেশজুড়ে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় শোক দিবসে আজ সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল পৌনে ৭টায় ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতি ও সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, দুপুরে অসচ্ছল দুস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ এবং বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

পুলিশ পরিবারের পক্ষ থেকেও পৃথক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আজ সকাল শ্রদ্ধা নিবেদন এবং পঁচাত্তরের কালরাতে শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, জাসদ, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, তরুণ লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পর্যটন করপোরেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, শিল্পকলা একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, এফবিসিসিআই, খেলাঘর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট, আইডিইবি, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, এফডিসি, কচি-কাঁচার মেলা, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, ডায়াবেটিক সমিতি, পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ফ্রন্ট, বৌদ্ধ সমিতি, বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, প্রার্থনা সভা, খাবার বিতরণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here