Char Gorgori Boishakhi Utsob 2018পাবনার নিভৃত পল্লী চরগড়গড়ি গ্রামে ৪ দিনব্যাপী চরনিকেতন বৈশাখী উৎসব ও বাংলা সাহিত্য সম্মেলন মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও পহেলা বৈশাখে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল হতে পাবনার ঈশ্বরদীতে কবির জন্মস্থানে শুরু হয় চারদিনব্যপী ‘চরনিকেতন বৈশাখী উৎসব’।  ওসাকা ও পাবনা সাংস্কৃতিক পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন ‘চর নিকেতন বৈশাখী উৎসব-১৪২৫ ও বাংলা সাহিত্য সম্মেলন’।  চরনিকেতন কাব্যমঞ্চে কবি মজিদ মাহমুদের ৫২ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানটি বৈশাখী উৎসবের উন্মাদনা নিয়ে পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহর থেকেই বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাসে খই-মুড়ি-মুড়কি, মিঠাই-সন্দেশ সহযোগে নাচে-গানে, ঢোলের বাদ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়।

এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে থাকে মঙ্গল শোভাযাত্রার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা এবং জমজমাট দেশজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য বাসনা থেকেই প্রতি বছরের মতো এবারও এপ্রিল মাসের ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৭ তারিখ এই ৪ দিনব্যাপী ‘চরনিকেতন বৈশাখী উৎসব ও বাংলা সাহিত্য সম্মেলন’- এর আয়োজন করা হয়েছিল।

সমকালের বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নক্ষত্র, মুগ্ধকর কবির প্রতিচ্ছবি মজিদ মাহমুদের জন্মদিনে তাঁকে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা, বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মননশীল পাঠকের কাছে মজিদ মাহমুদ একটি সুপরিচিত নাম।  তাঁর গদ্য এবং পদ্য উভয় বাংলার সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত।  ১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর প্রথম বই ‘বৌটুবানী ফুলের দেশে’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে।  পরের বছর প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ ‘মাকড়সা ও রজনীগন্ধা’ (১৯৮৬)।  ১৯৮৯ সালে প্রথম কবিতার বই ‘মাহফুজামঙ্গল’ প্রকাশের পর তিনি পাঠকের দৃষ্টি কাড়েন।  কবিতা, গল্প, উপন্যাস ছাড়াও মননশীল প্রবন্ধ ও গবেষণাকর্মে খ্যাতি রয়েছে মজিদ মাহমুদের।  নজরুল ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীনে কাজ করেছেন তিনি।

দেশের স্বনামধন্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, দেশী-বিদেশী কবি-সাহিত্যিক ও বরেণ্য ব্যক্তিবর্গসহ স্থানীয় সকল শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে বৈশাখী উৎসব শুরু হয়েছিল।

পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরেই খই মুড়কি মুড়ি, মিঠাই সন্দেশ সহযোগে নাচে-গানে, ঢোলের বাদ্যে শোভাযাত্রা শুরু হয়।  উৎসবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, বইমেলা, সাহিত্য সেমিনার, জারিসারি গান, কবিতাপাঠ, গীতিনাট্য, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ধাঁচের অনুষ্ঠানসমূহ পরিচালিত হয়েছে।  গত বছরই প্রথমবারের মতো দেশের দুজন প্রবীন ও বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে ‘চর গড়গড়ি পুরস্কার-২০১৭’ প্রদানের ঘোষণা করা হয় ।  সাংবাদিকতায় আজীবন অবদানের জন্য প্রবীন সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রনেশ মৈত্র এবং সাহিত্য-সাধনায় আজীবন অবদানের জন্য বহুমাত্রিক সাহিত্য সাধক জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে এই পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে ‘চর গড়গড়ি পুরস্কার’ -এর শুভ সূচনা হয়েছিল।  এবারও দুজন ব্যক্তিত্বকে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় আজীবন অবদানের জন্য ‘চর গড়গড়ি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছে।

Char Gorgori Boishakhi Utsob 2- 2018

মজিদ মাহমুদের জন্ম ১৬ এপ্রিল ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে পাবনা জেলায়।  পিতা কেরামত আলী বিশ্বাস।  মা সানোয়ারা বেগম।  পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  বাংলা ভাষা সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর।  লেখালেখির হাতেখড়ি শিশুবেলা থেকেই।  কবিতা তাঁর নিজস্ব ভুবন হলেও মননশীল গবেষণাকর্মে খ্যাতি রয়েছে।  নজরুল ইনসটিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীনে তিনি কাজ করেছেন।  সাংবাদিকতা তাঁর মূল পেশা হলেও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে।  তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে।

এ যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ৩০।  তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো, কাব্যগ্রন্থ : মাহফুজামঙ্গল (১৯৮৯), গোষ্ঠের দিকে (১৯৯৭), বল উপাখ্যান (২০০১); আপেল কাহিনী (২০০২) মাহফুজামঙ্গল উত্তরখ- (২০০৪), ধাত্রী-ক্লিনিকের জন্ম (২০০৮), দেওয়ান-ই-মজিদ (২০১১), সিংহ ও গর্দভের কবিতা (২০১৩), কাঁটাচামচ নির্বাচিত কবিতা (২০০৯)। গবেষণা ও প্রবন্ধগ্রন্থ : নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র (১৯৯৭); কেন কবি কেন কবি নয় (২০০৩); নজরুলের মানুষধর্ম (২০০৩); ভাষার আধিপত্য ও বিবিধ প্রবন্ধ (২০০৩), উত্তর-উপনিবেশ সাহিত্য ও অন্যান্য (২০০৮); রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণসাহিত্য (২০০৯); সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা (২০১১); রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ (২০১২), ক্ষণচিন্তা (২০১৬), সম্পাদনা : বৃক্ষ ভালোবাসার কবিতা (২০০০); জামরুল হাসান বেগ স্মারকগ্রন্থ (২০০৩), বাংলা লিটারেচার ও সাহিত্য চিন্তার কাগজ পর্ব।

প্রতিবেদনঃ মধুসূদন মিহির চক্রবর্তী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here