শেরপুরে জেলা ও দায়রা জজসহ শীর্ষ চার বিচারকের পদ শূন্যতার কারনে বিচার কার্যে চরম অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রতি সরকারী কার্য দিবসে শত শত বিচার প্রার্থী মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেই সাথে দূর্ভোগের শিকার বিচার প্রার্থী মানুষের নানা প্রশ্নে ঘোরপাক খেতে হচ্ছে সংশিষ্ট আইনজীবীদেরকেও।

জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ২ মাসব্যাপী আইনজীবীদের বৃহত অংশের আন্দোলনের এক পর্যায়ে হাই কোর্ট বিভাগের এক বিচারপতির মধ্যস্থতায় বহাল থাকলেও শেরপুরের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মুর্শীদ আলম গত ২৫ নভেম্বর অবসরে চলে যান। এরপর থেকে জেলা ও দায়রা জজের পদটি শূন্য রয়েছে। এছাড়া বদলিজনিত কারনে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর পদটি শূন্য রয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে। আর একই কারনে যুগ্ম জেলা জজ-১ এর পদটি শূন্য রয়েছে গত জুলাই মাস থেকেই। এ অবস্থায় বর্তমানে কর্মরত যুগ্ম জেলা জজ-২ মোঃ আখতারুজ্জামান নিজ দায়িত্বের বাইরে ওই শীর্ষ তিন বিচারকের দায়িত্বেও রয়েছেন। কিন্তু আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নিজ দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বের কোন মামলার শুনানীই তিনি গ্রহণ করছেন না। অর্থাৎ শূন্য তিন বিচারকের অধীনে বিচারাধীন কোন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণসহ বিচার কার্য ও হাজতী আসামীর জামিন শুনানী যেমন হচ্ছে না, ঠিক তেমনি জজ আদালতে বিচার্য্য গুরুতর বা লঘু কিংবা অন্যকোন তদন্তাধীন মামলার হাজতী আসামীদের জামিন শুনানীসহ অন্যান্য আসামীদের আত্মসমর্পনও সম্ভব হচ্ছে না জজ আদালতে। একইভাবে নিম্ন আদালতের ফৌজদারী মামলায় সাজা এবং দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলায় অন্য কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপীল ও রিভিশন মামলার গ্রহণ-শুনানীও হচ্ছে না। এছাড়া বদলীজনিত কারনে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের পদটি শূন্য রয়েছে প্রায় ২ বছর যাবত। ফলে নিজ দায়িত্বের বাইরে বর্তমানে কর্মরত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ সেলিম মিয়াকে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। আদালত সূত্র জানিয়েছে, জজশীপের আওতায় জেলা ও দায়রা জজসহ শীর্ষ তিন বিচারকের অধীনে ফৌজদারী ও দেওয়ানী মিলে প্রায় ৭ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেই সাথে তদন্তাদীন রয়েছে প্রায় ১ হাজার মামলা। আর এসব মামলায় প্রায় ৫০ সহস্রাধিক বিচার প্রার্থী মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় হাজতে থাকা প্রায় ২শ আসামীর  জামিন শুনানী মোটেই হচ্ছে না। এর ফলে দায়রা জজ আদালতে শুনানী না হওয়ায় অর্থাৎ জামিনের পরিবর্তে তা নাকচের আদেশটি পর্যন্ত না হওয়ার কারনে সংশিষ্ট হাজতী আসামীরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হতে পারছেন না। অন্যদিকে বিচারক শূন্যতায় শুনানীর অভাবে ১শ হাজতী-কয়েদীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শেরপুর জেলা কারাগারে দিন দিন সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তা প্রায় ৪ শতে উন্নীত হওয়ায় সেখানেও হাজতী-কয়েদীদের দূর্ভোগ বেড়ে গেছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ বিচার প্রার্থী মানুষজন দিনের পর দিন আদালত প্রাঙ্গনে অপেক্ষা করলেও বিচারক না থাকায় তারা মনে কষ্টে নিয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। আব্দুল হান্নান নামে ভুক্তভোগী এক আসামীর বৃদ্ধা মা জানান, মাদক মামলায় প্রায় ৬ মাস যাবত তার সন্তান হাজতে থাকলেও বিচারক না থাকায় অনিশ্চয়তার মাঝে দিন কাটাতে হচ্ছে। এমনি অবস্থা আরো অনেকের। কিন্তু শীর্ষ তিন বিচারকের শূন্যতা পূরণের মধ্য দিয়ে কখন বিচার প্রার্থী জনগণের দূর্ভোগের অবসান হবে, তার কোন সঠিক জবাব জানা নেই খোদ জেলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তাদেরও। ফলে প্রতিদিনই বিচার প্রার্থী বাদী-বিবাদী আর সাক্ষীদের নানা প্রশ্নে জর্জরিত হচ্ছেন সমিতির কর্মকর্তাসহ সাধারণ আইনজীবীরাও।

এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার জেলা ও দায়রা জজসহ জজশীপের তিন শীর্ষ বিচারক ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট পদের শূন্যতায় বিচারপ্রার্থী জনগণের দূর্ভোগের কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন, ওই শূন্যতা পূরণের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনগণের দূর্ভোগ লাঘবে আমরা বিষয়টি আইন মন্ত্রনালয়সহ সংশিষ্ট বিভাগকে অবহিত করেছি।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহরিয়ার মিল্টন/শেরপুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here