সংস্কারের অভাবে আশির দশকে নির্মিত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর স্লুইচ গেইট ধ্বসে গেছে পানির তোড়ে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ। রোববার বেলা প্রায় দেড়টার দিকে আকিস্মক বিকট শব্দে স্লুইচ গেইটটি ভেঙে প্রবল বেগে মজুদকৃত পানি ভাটিতে ছুটলে আতংকিত হয়ে ছুটে আসেন এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বোরো আবাদের লক্ষ্য নিয়ে সেচকাজে ব্যবহারের জন্য আশির দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক চেল্লাখালী নদীর সন্নাসীভিটা গ্রামে নির্মাণ করা হয় স্লুইচ গেইটটি। প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক স্লুইচ গেইটটি সংস্কার করার নিয়ম থাকলেও বিগত তিন বছর যাবত তা সংস্কার করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ফলে বিগত বর্ষা মৌসুমের বন্যায় বিভিন্ন স্থানে সুরঙ্গের সৃষ্টি হয়। গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্লুইচ গেইট কমিটির পক্ষ থেকে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে স্লুইট গেইটটিতে বাঁধ দিয়ে উজানে পানি মজুদ করা হয়। কিন্তু সুরঙ্গ দিয়ে প্রবাহমান পানির তোড়ে গত কয়েক দিনে স্লুইচ গেইটের মূল স্ট্রাকচারের নিচের মাটি সড়ে যায়। ফলে আকস্মিক স্লুইচ গেইটের প্রায় দুইশ ফুট জায়গা বিধ্বস্ত হয়ে মিশে যায় নদীতে। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই নদীর উজানে পানি শূন্য হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ৪০টির মতো সেচযন্ত্র। পানিশূন্য হয়ে পড়ে ক্যানেলগুলোও। এদিকে স্লুইচ গেইটের পানির ওপর নির্ভরশীল রাজনগর, নন্নী ও বাঘবেড় ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক পুরোদমে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছেন। স্লুইচ গেইটটি বিধ্বস্ত হওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে তাদের প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ। স্থানীয় কৃষক বাহাজ উদ্দিন জানান, বিগত তিন বছর যাবত স্লুইচ গেইট সংস্কারের কোন বরাদ্দ আসে না। ফলে স্লুইচ গেইটটি দূর্বল হয়ে পড়ে এবং বেশ কিছুদিন যাবত সুরঙ্গ তৈরি হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। শাহাজ উদ্দিন জানান, বেলা প্রায় দেড়টার দিকে পানির বিকট শব্দ শোনে দৌড়ে এসে দেখি স্লুইচ গেইটটি ভেঙ্গে গেছে। এতে আমাদের বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। আমরা এখন পথে বসে পরলাম। প্রান্ত কৃষ্ণ বর্মন জানান, নদীর উজানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করে সেচের ব্যবস্থা না নিলে আমরা বোরো আবাদ করতে পারবো না। স্লুইচ গেইট পরিচালনা কমিটির সভাপতি আহাজ উদ্দিন জানান, আমরা সবাই মিলে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গত কয়েকদিন আগে বাঁশ, খড়কুটা আর মাটি দিয়ে স্লুইচ গেইটটিতে বাঁধ দেই। কিন্তু গত রোববার এটি ভেঙ্গে যায়। এতে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। তিনি আরও জানান, স্লুইচ গেইটে বাঁধ দেওয়ার জন্য মোটা কাঠের স্লাব ছিল। এগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড আর দেয়নি। তাই আমরা বাঁশ আর খড়কুটা দিয়ে বেড়া তৈরি করে পড়ে মাটি ফেলে বাঁধ তৈরি করি।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এখানের কৃষকরা। তবে আমি সরেমজিন পরিদর্শন করে দেখেছি, একটু উজানে নদীর সরু অংশে দ্রুত মাটির বাঁধ দিতে পারলে কিছু জমি সেচের আওতায় আনা যাবে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজামুল হক ভুইয়া জানিয়েছেন, তিনি প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় চলে এসেছেন । বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন ।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ শাহরিয়ার মিল্টন/শেরপুর