মোঃ শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বঙ্গবন্ধুকে কখনও স্বচক্ষে দেখিনি। রেডিওতে তার ভাষন শুনে বুঝতে পারি বাংলার মানুষের ভাল থাকতে হলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। স্বাধীনতার পূর্বে সেই যুবক বয়সেই শুরু করি আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সংসার, ছেলে মেয়ে কারও দিকে কোন খেয়াল করিনি। ১৯৭৫ সালে কিছু বিপদগামী সেনা সদস্যদের হাতে বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের চরম দূ:সময়েও দলের সাথে ছিলাম। অন ইলেভেনের সময়ও দলের দায়িত্বে ছিলাম। বয়সের কারণে এখন আর দলের তেমন কোন কাজে আসতে পারি না। কিন্তু মৃত্যুর আগে একবারের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার স্বচক্ষে দেখতে চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অশতিপর এক বৃদ্ধ ।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশ বছরের সভাপতি মোঃ ইদ্রিস আলী তালুকদার। দীর্ঘদিন দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রাজনীতি করতে যেয়ে হামলা-মামলারও শিকার হয়েছেন একাধিকবার। বছর চারেক আগে হঠাৎ অসুস্থ্যতায় তার স্ত্রী মারা যায়। তার কিছুদিন পর নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এখন আর আগের মত স্লোগান তুলতে পারেন না, এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মীদের জড়ো করে মিটিং মিছিল করতে পারেন না। কিন্তু দলের যেকোন সভা সমাবেশের কথা শুনলে অসুস্থ্য অবস্থায়ও ভ্যান বা নৌকা যোগে চলে যান সেখানে। প্যান্ডেলের পাশে নিরবে বসে দলীয় কর্মকান্ড দেখেন। শেষ বয়সে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য চোখের পানি ফেলেন প্রতিরাতে এই বৃদ্ধা এমনটি বললেন তার সন্তানেরা।
মোঃ ইদ্রিস আলী তালুকদারের একমাত্র ছেলে শিক্ষক টিএম জহিরুল ইসলাম রিপন বলেন, বাবা সারাজীবন রাজনীতি করেছেন। আমাদের কোন আবদার ছিল না বাবার কাছে। রাজনীতি করে তিনি কি পেয়েছেন! আমরা কি পেয়েছি সে হিসেবে কখনও করিনা। শিক্ষকতা করে জীবন চালাই। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে বাবা যখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার কথা বলে হাওমাউ করে কাঁদের আমাদের সামনে তখন বুক ফেটে যায় কষ্টে। আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কিছু চাই না শুধু বাবাকে একবার তার সাথে দেখা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাই।
আরেক সন্তান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খালিদা ইয়াসমিন বলেন, মা মারা যাওয়ার পরে সব সময় বাবার দিকে খেয়াল রাখি। বাবার চাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করি।আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করাও এই বলে যখন বাবা কাঁদতে থাকে তখন খুব কষ্ট হয়।
বহরবুনয়িা ইউনয়িন আওয়ামী লীগরে সহ-সভাপতি আব্দুল লতফি হাওলাদার বলনে, স্বাধীনতার আগে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন ইদ্রিস আলী তালুকদার। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে তিনি সফল ভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বয়সের ভারে তিনি এখন আর দলীয় কাজ করতে পারেন না।কিন্তু এই দলের জন্য তার অবদান রয়েছে। অনেক হামলা মামলার শিকার হয়েছেন তিনি। বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন মারা গেছেন। এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন এখন আমাদের অভিভাবক। তার কাছে আমি দাবি জানাই তিনি যেন দলের এই ত্যাগী নেতা ইদ্রিস আলী তালুকদারকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রচুর দলীয় কোন্দল রয়েছে। মোঃ ইদ্রিস আলী তালুকদার দলের জন্য অনেক কিছু করেছেন। এখন তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন।বৃদ্ধ ও আর্থিক সংগতি না থাকায় উপজেলার অনেক ত্যাগী নেতা এভাবে নিরবে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। এ ধরণের ত্যাগী নেতাদের একটু সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই দলের নেতাদের কাছে।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা বৃদ্ধ মোঃ ইদ্রিস আলী তালুকদার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ৬ মেয়ে ও এক ছেলে আমার। রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের দেখভালও করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ আল্লাহ আমাকে দেয়নি। মৃত্যুর আগে একবারের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেখতে চাই। এছাড়া এই পৃথিবীতে আমার চাওয়ার কিছু নেই।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সভাপতি বাগেরহাট-৪ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোঃ ইদ্রিস আলী তালুকদার একজন ভাল মানুষ। দলের দুঃসময়ের সাথী। দলের জন্য তিনি অনেক ত্যাগ শিকার করেছেন। তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় আছেন। দলের সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তাকে দেখা করানোর জন্য আমি চেষ্টা করব।