শুভ মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে রাঙামাটির আনন্দ বিহারে ৭৭তম ঐতিহ্যবাহী ব্যুহচক্র মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় ফিতা কেটে ব্যুহচক্র মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আনন্দ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথের, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান, আনন্দ বিহার পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সরোশ কান্তি চাকমা, ও লতিকা চাকমা, সাধারণ সম্পাদক প্রবনিন্দু চাকমা, সদস্য সমির কান্তি চাকমা প্রমুখ। উদ্বোধনের পর ব্যুহচক্র মেলা সবার জন্য উম্মুক্ত করে দিলে মেলায় অংশ নিতে শত শত ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ নারী-পুরুষ দলে দলে যোগ দেয়। ব্যুহচক্র মেলা উপলক্ষ্যে আনন্দ বিহার মাঠে এক রকমের চক্রবাক বা প্যাঁচঘর তৈরী করা হয়। তার মাঝখানে কারুকার্য় দিয়ে মন্দির তৈরি করে সেখানে রাখা হয় বৌদ্ধকে। আর এই চক্রবাক বা প্যাঁচঘরকে দল বেঁধে ঘুরে অভিষ্টস্থানে পৌঁছাতে হয়। আবার দলে দলে ঘুরে বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়। এতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে লোভ-বিদ্বেষ-মোহ ও হিংসামুক্ত জীবন গড়ার জন্য মহান পুণ্যদানে অংশীদার হওয়া যাবে এমনটাই প্রত্যাশা ভক্তদের।
বৌদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, এই চক্র আবর্তন করে যে চক্রের বাঁধা অতিক্রম করে অভিষ্টস্থানে পৌঁছাতে পারে তিনিই পূণ্যের অধিকারী। কোনো লোক চাইলেই বহু আকাঙ্খিত পূণ্যতা লাভ করতে পারে না। সংসার চক্রে ঘুরতে ঘুরতে জীবদ্দশার ভালো কর্মের প্রভাবে একপর্যায়ে মানুষ পূণ্যতা লাভ করতে সক্ষম হয়, আবার পুর্নজন্ম গ্রহণ করে মর্ত্যলোকে ফিরে আসে। তাই এই বিশ্বাস থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই পূণ্য অর্জন করতেই এই বহুচক্র আবর্তনে অংশ নেয়। পুণ্যের আশায় অনেকই তা অতিক্রম করতে পারে আবার যাতের মধ্যে পাপি ব্যক্তি তারা সহজে তা অতিক্রম করতে পারেনা। ব্যুহচক্রের ভেতরে আটকা পড়ে এবং আরেকটি রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে আসতে হয়।
প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র আনন্দ বিহারে প্রতিবছর শুভ মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে এই ব্যুহচক্র মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উদ্বোধনের পর শুভ মাঘী পূর্ণিমার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নয়, অন্যান্য সমপ্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহণে এ উৎসব সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আলমগীর মানিক/রাঙ্গামাটি