বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলার মাঠের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-সেনা সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে গঠিত সংসদীয় উপ-কমিটি তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে।

প্রতিবেদনে জড়িত শীর্ষ ব্যক্তিদের দায়ী করে তাদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন, আগামী ২১ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদন মূল কমিটিতে পেশ করার পর তা সংসদে উত্থাপন করা হবে।

কমিটির বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে মেনন সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ১১টি পর্যবেক্ষণ ও ১৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা চুনো পুটি কাউকে ধরার চেষ্টা করেনি। এ ঘটনায় জড়িত মূল ব্যক্তিদের নির্ধারণ করেছি। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছি।’

ওয়ার্কার্স পার্টির এই সভাপতি আরো বলেন, ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের কীভাবে আইনের আওতায় আনা যাবে, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। আর এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সেজন্য প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি।

ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নিজের জড়িত থাকার দায় অস্বীকার করে সে সময়ের সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ঘটনার জন্য তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে দোষারোপ করেছেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিকনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ঘটনার জন্য মাঠ পর্যায়ের সেনা সদস্যদেরও দায়ী করেন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাবেক এই সেনাপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

এদিকে, একই ইস্যুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাচ্ছেন না। কমিটির সাথে তিনি যোগাযোগ না করায় কমিটি তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, ঢাবির ওই ঘটনা নিয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের সংসদীয় উপ-কমিটি গঠন করা হয়।

পরে ওই ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন এবং সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজনে উপ-কমিটি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানায়। তবে প্রত্যেকবারই আমন্ত্রণের চিঠি গ্রহণ করলেও সশরীরে বৈঠকে হাজির হতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।

এর আগে কমিটির তদন্তের প্রথম পর্যায়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাক্ষ্য নেয়। তারা ওই ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের দায়ী করেন।

দ্বিতীয় পর্যায়ে সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা আইয়ুব কাদেরী, সাবেক শিক্ষা সচিব মমতাজুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুল করিম, সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

উল্লেখ্য, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও সেনা সদস্যদের সাথে  ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

ওই সহিংসতা ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় ছয় বিভাগীয় শহরে কারফিউ জারি করে।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫৩টি মামলা করে। ওই ঘটনায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করা হয়। নির্বিচারে আটক করে নির্যাতন করা হয় ছাত্রদের।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here