প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী:: ২ থেকে ৫ বছর বয়সের সন্তান। সে এখন কথা বলতে শিখেছে, বাইরের দুনিয়ার বাতাস লেগেছে তার মনে। টোডলারস যারা ১ থেকে ৩ বছর বয়সের, ভীতু হেঁটে একটু দূরে চলে যায়- পরক্ষণে আবার প্রধান ভরসা মা-বাবার কাছে ফিরে আসে। স্কুলে যাওয়া-আসা করতে করতে সে খেলাধুলার নিয়ম-কানুন বুঝতে চেষ্টা করে, সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে নিজের নৈপুণ্য দেখাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
এ সময় তার মস্তিষ্কে বিপুল পরিবর্তন হয় তার আয়তনে ও স্বরূপে। বিশেষত মেধাবিকাশের ক্রিটিকেল ক্ষেত্রটাতে।
২য় বছরে এসে তার ব্রেইনের বৃদ্ধি ও শরীর বৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হয়ে আসে, ফলে তার খিদে কমে যায়। অভিভাবক এ বিষয়টি না বুঝে তাকে জোর করে খাওয়াতে চান। মনে রাখতে হবে সুস্থ শিশুর খিদে তার শরীর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে মিল রেখে চলে। শিশুর দৈনিক খাবার গ্রহণের পরিমাণে বেশ কম থাকলেও পুরো সপ্তাহ মিলে সে তার খাবারের পরিমাণ ঠিক রাখে।
এ বয়সে তাকে খাওয়ানোর শিডিউল মাফিক দৈনিক ৩ বার প্রধান খাবার ও ২ বার স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস সরবরাহ করা যায়। তাকে যথাযথভাবে অনুপুষ্টি (ভিটামিনস্ ও মিনারেলস্) যোগান দিতে হবে। এবং এ কাজে সম্পূর্ণ ক্যাটাগরির মাল্টিভিটামিন বেশ কাজে লাগে।
শিশু এ বয়সটাতে গড়ে ২ কেজি (৪ থেকে ৫ পাউন্ড) ওজন ও ৭ থেকে ৮ সে.মি. (২ থেকে ৩ ইঞ্চি) উচ্চতা পায়। ৩ বছর বয়সের মধ্যে শিশুতে ২০টা দুধ দাঁতের সবটা গজিয়ে যায়।
তাদের ঘুমের পরিমাণ পূর্ব অবস্থা থেকে কমে দৈনিক ১০ থেকে ১১ ঘণ্টার মতো হয়। দিবানিদ্রা আর থাকে না বললেই চলে।
৩ বছর বয়সে এসে বড়দের মতো ছন্দ রেখে হাঁটতে পারে- দৌড়াতে পারে সমান তালে। বল থ্রো করা, বলে কিক মারা এসব কর্ম নৈপুণ্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে। এ বয়সে একেক শিশু একেক স্টাইলে হাঁটে। কোনো কোনো শিশু বেশ দুরন্তপনা দেখায় ফলে ইনজুরিতে পড়ার আশংকা থাকে বলে মা-বাবাকে এ বয়সের শিশুর জন্য সদা-সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সাধারণভাবে ২ বছরের শিশু ২ শব্দের, ৩ বছরের শিশু ৩ শব্দের বাক্য সাজাতে পারে।
২ থেকে ৫ বছরের শিশুতে শব্দ বলার ক্ষমতা ৫০ থেকে ২০০ শব্দ সংখ্যা হতে হঠাৎ করে ২০০০ শব্দ সংখ্যাতে দাঁড়ায়। যে শিশু বাকস্ফুটনে অস্বাভাবিক থাকে, তাকে আগেভাগে ‘শিশুবিকাশ কেন্দ্রে’ পরীক্ষা করে দেখান উচিত।
অটিজম শনাক্ত করার জন্য এ একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
শিশুকে ছবি দেখিয়ে পড়ানো হলে ও তা বারবার করে ফিডব্যাক নেয়া হলে তার পড়াশোনার ভীত মজবুত হয়।
এ বয়সে শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দেয়া যায় তবে তাতে যেন বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা না হয়। টয়লেটে না যাওয়া নিয়ে অনেক শিশু জেদ ধরে ও ফল হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্যে পড়ে।
৪ বছর বয়স পর্যন্ত কন্যা শিশুতে ও ৫ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে সন্তানে বিছানা ভেজানো স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া যায়। তবে এর বেশি বয়সে তা হতে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিতে হবে।
এ বয়সে প্রায় ৫ শতাংশ শিশু তোতলায় এবং তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ ৮ বছর গিয়ে আপনা-আপনি সেরে ওঠে। কিন্তু তোতলানো যদি চরম প্রকৃতির হয় তবে তার চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ জরুরি।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ