মোড়েলগঞ্জমুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম, মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার হোগলাপাশা আশ্রায়ন প্রকল্পে দরিদ্র পরিবারের কোমলমতি শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন হোগলাপাশা ইউনিয়নের কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ তরুণী। তাদেরই উদ্যোগ, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে হোগলাপাশা আশ্রায়ন প্রকল্প বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ প্রকল্পে পূণর্বাসিত পরিবারগুলো অভাব-অনটনের মধ্যে বসবাস করায় তাদের শিশুদের লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা ও সামর্থ কোনটাই ছিলনা। এমন অবস্থায় কোমলমতি এসব শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে এগিয়ে আসে কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ তরুণী। ফলে তাদের এ প্রচেষ্টা দেশে শিক্ষা সম্প্রসারণ কর্মসূচিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন এলাকার শিক্ষানুরাগী, সচেতন নাগরিক সমাজ ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার আমলে বাগেরহাট-পিরোজপুর ২ জেলার সিমান্তবর্তী বলেশ্বর নদীর পশ্চিম তীর মোরেলগঞ্জ উপজেলার হোগলাপাশা গ্রামে ০৬ একর সরকারি খাসজমিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হোগলাপাশা আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় ৬০টি ভূমিহীন পরিবারকে পূণর্বাসিত করা হয়। কিন্তু ওই আশ্রায়ন প্রকল্প এলাকার ০২ থেকে ০৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় ওই বছরই হোগলাপাশা আশ্রায়ন প্রকল্প বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়।

পরবর্তীতে আশ্রায়ন প্রকল্পের আশ-পাশ এলাকায় আরও ২ শতাধিক পরিবার বসতি স্থাপন করে। এসময় উক্ত এলাকার ইউপি সদস্য মো. হানিফ শেখ-এর তত্ত্বাবধানে একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে এলাকার শিক্ষানুরাগী সমাজসেবক ও জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক-এর এক জরিপে হোগলাপাশা আশ্রায়ন প্রকল্প এলাকায় বিদ্যালয়মুখী ২ শতাধিক শিশু রয়েছে।

মোড়েলগঞ্জবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রি রয়েছে এবং শিক্ষিকা রহিমা আক্তার, রেকসনা আক্তার, মন্দিরা মিস্ত্রিসহ মোট ৪ জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিরলসভাবে বিদ্যালয়ে পাঠদান করে আসছেন।

তিনি আরও জানান, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এবং আশ্রায়ন প্রকল্পের সভাপতি মো. হেমায়েত হোসেন হিমুসহ অন্যরা সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন।

সম্প্রতি হোগলাপাশা আশ্রায়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড.শাহ-ই আলম বাচ্চু। এসময় তিনি ওই প্রকল্পে শিশুদের শিক্ষাবিস্তারে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কার্যক্রমের প্রশংসা করে বিদ্যালয়টিতে সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

এছাড়া হোগলাপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মফিজুল হক, বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ রেজাউল ইসলাম নান্না বিদ্যালয়টির ব্যাপারে সহযোগিতা করে আসছেন বলে জানা যায়।

অভাব অনটনের মধ্যে বসবাসকারী খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পক্ষে অর্থ ব্যয় করে তাদের কোমলমতি শিশুদেরকে বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতির সাথে সংগতি রেখে শিক্ষা গ্রহণ করানো সম্ভব নয়। তাই বিনা বেতনে ও বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ পেতে বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করা গ্রামবাসীর প্রাণের দাবি।

আশ্রায়ন প্রকল্পের আশ-পাশে গড়ে ওঠা ২ শতাধিক পরিবারের প্রায় ৪ শত কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করার পদক্ষেপকে আরও গতিশীল করতে বিদ্যালয়টিকে সরকারি বিদ্যালয়ে উন্নীত করলে হত-দরিদ্র পরিবারগুলোর ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ আরও সহজ হবে বলে তারা মনে করেন এলাকাবাসী।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here