আল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পদ অফিস সহাকারী। কিন্তু ক্ষমতা অনেক। তাদের হাতে জিম্মি প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা, দপ্তরি এমন কি কর্তাব্যক্তিরা। তাদের চাহিদা মতো উৎকোচ না দিলে ফাইল নড়ে না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ভুগতে হয় বছরের পর বছর। আর এমন ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা হলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী বিমল কান্তি চাকমা ও উচ্চমান অফিস সহকারী বিজয় কুমার বড়ুয়া। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সমন্বয় সভায় শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করলেও ফলের ফল কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমল চাকমা ২০১০ সাল থেকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন। সে থেকে শুরু হয় ঘুষের মহোৎসব। তার সীমাহীন ঘুষ,দূর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সীমাহীন হয়রানীর শিকার হচ্ছে,খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দপ্তরিরা।
বিমল চাকমাকে উৎকোচ দেওয়ার পরও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকুরি বহি: এখনো হাল নাগাদ করা হয়নী এমনও অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাদের শান্তি বিনোদন ভাতা ও ব্যক্তিগত বেতনসহ বিভিন্ন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপর দিকে একই অফিসের উচ্চমান সহকারী বিজয় কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দিয়ে অন্য ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না শর্তে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার অভিযোগ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কারো-কারো চাকুরি বহি: ২০১১ সাল থেকে হাল নাগাদ করা (শান্তি বিনোদন ভাতা ও লিপি লিপিবদ্ধ করা) হয়নি। ফলে তারা শান্তি বিনোদন ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনৈক শিক্ষক নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর শান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও বিমল কান্তি চাকমা গাফেলতির কারণে তিনি একটি শান্তি বিনোদন ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি জাতীয় বেতন-স্কেল ঘোষনা হলে বিমল চাকমা উৎকোচের জন্য নানা অজুহাত দেখিয়ে সদর উপজেলার প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকুরি বহি: ফেলে রাখেন। শিক্ষক নেতারা তাকে সহযোগিতা করতে চাইলেও বিমল কান্তি চাকমা অসহযোগিতার কারণে সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। যে সব শিক্ষকের চাকুরি বহি হাল নাগাদ করা হয়েছে,তাও ভুলে ভরা। ফলে শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছে।
জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষনার সদর উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-দপ্তরিদের চাকুরি বহি: হাল নাগাদ করতে বিমল কান্তি চাকমাকে পাঁচশত টাকা করে উৎকোচ দিতে হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক অফিস সহকারী কাম-দপ্তরি অভিযোগ করেছেন।
অপর দিকে একই অফিসের উচ্চমান সহকারী বিজয় কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০০৮ সাল থেকে এ অফিসে কর্মরত আছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একই অফিসের জনৈক কর্মচারী জানান, বিজয় কুমার বড়-য়া প্রতিদিন দুপুর দেড় টার পর অফিস ত্যাগ করেন। এর পর তিনি আর অফিসে আসেন না।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি একটি আন্তরেজি: সংগঠনের সাথে জড়িত। প্রতি বছর তিনি বৃত্তি দেওয়ার নাম করে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দেড়শ টাকা করে চাঁদা আদায় করে থাকেন। পরবর্তীতে হাতে গুনা কয়েক জনকে নাম মাত্র পুরস্কার দিয়ে মোটা অংকের টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত এ দুই অফিস সহকারী একই কর্মস্থলে দীর্ঘ দিন থাকার কারণে কাউকে তোয়াক্কা করছে না।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আশা প্রিয় ত্রিপুরা জানান, বিমল কান্তি চাকমা ও বিজয় কুমার বড়ুয়ার দায়িত্বে অবহেলা,দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভাগুলোতে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার না হওয়ায় তাদের দাপট আরো বেড়েছে।
তবে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন,অফিস সহকারী বিমল কান্তি চাকমা ও উচ্চমান অফিস সহকারী বিজয় কুমার বড়ুয়া।
অভিযোগের বিষয়ে অফিস সহকারী বিমল কান্তি চাকমা প্রথমে অভিযোগ আংশিক সত্য বলে স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করেন। অন্যদিকে বেলা ১১টায় দিকে গিয়েও অফিসের উচ্চমান অফিস সহকারী বিজয় কুমার বড়-য়াকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নী।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: মামুন কবীর বলেন, এ সব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।