ষ্টাফ রিপোর্টার :: স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নকে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, ‘স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। ছেলেদের তুলনায় বিদ্যালয়ে মেয়েদের হার বেশি। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ মেয়ে। তবে শিক্ষার্থীর হার বাড়লেও গুণগত মানোন্নয়ন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
আজ বুধবার (৩ আগস্ট ২০১৬) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে “ইয়াং চেঞ্জ মেকারস’ কোয়ালিশন” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- ‘ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনে তরুণ সমাজের ভুমিকা’। ইয়ং চেঞ্জ মেকারস কোয়ালিশনের সদস্য ১২টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত প্রায় শতাধিক তরুণ-তরুণীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। সংস্থা গুলো হলো- প্ল্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ইয়ুথ ফর চেঞ্জ, সেভ দ্যা চিলড্রেন, সেরাক বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন, ইয়ুথ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল, সাইট সেভারস, ভিএসও, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্ক ফোর্স, দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্ট, এসএনভি নেদারল্যান্ডস।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুভাষ চন্দ্র সরকার। সেরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এসএম সৈকতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্ল্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘ইয়ুথ ফর চেঞ্জ’ প্রকল্পের সদস্য আয়শা আক্তার কেয়াসহ বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী বক্তব্য রাখেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘সরকার বর্তমানে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মেয়ে এবং ১০ শতাংশ ছেলে। মেয়েদের উপবৃত্তির পাশাপাশি বিনামূল্যে বই দেওয়ার কারণে উপস্থিতির হার বাড়ছে। আমরা গত বছর ৩৩ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। আগামী বছর জানুয়ারিতে ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পিস স্কুলসহ অনুমোদনহীন সকল বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে। পিস স্কুলে আমাদের প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে মিল নেই। সেখানে যেসব পাঠদান করা হয়, তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে মিলে না। আমাদের সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস, প্রথা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে থাকা কোন শিক্ষা কার্যক্রম চলতে পারে না।’ এই সময় পিস স্কুল বন্ধের জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক ও অভিভাবকদের আমি বলবো, আপনারা পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের পছন্দ এবং অপছন্দের বিষয়ে জানুন। তাদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিন। সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করুন। শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাদের পক্ষে কোনোভাবেই খারাপ কাজ করা সম্ভব না।’
নাসিমা বেগম বলেন, ‘মেয়েরা এই সমাজকে বদলে দিতে পারবে। বর্তমানে এমন কোন পেশা নেই, যেখানে মেয়েদের অবাধ বিচরণ নেই। গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। রাজনীতি থেকে শুরু করে সমাজের এমন কোন ক্ষেত্র নেই, যেখানে মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অন্ধকারে রেখে উন্নত দেশ গঠন করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকার বহুমুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের রাখার জন্য কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানিসহ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এই ক্লাব কাজ করবে।’
আয়োজকরা জানান, এই কোয়ালিশনের মূল উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করেছে ইয়ুথ ফর চেঞ্জ নামক তরুণদের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রকল্প। কোয়ালিশনের সদস্যদের মতে এটি এমন একটি স্থান যেখানে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করবে, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে এমন সকল বিষয়ে যা তাদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষত বাল্যবিবাহ, প্রজননস্বাস্থ্য ও শিক্ষা, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে ক্যাম্পেইন ও অ্যাডভকোসি কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানের সমাজের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন তরুণ-তরুণীরা। পাশাপাশি উপস্থিত অতিথিদের কাছে কিছু সুপারিশমালা পেশ করেন তারা।