ডেস্ক রিপোর্ট::  কোরআনের প্রায় সব সূরা ও আয়াতের আলাদা আলাদা ‘শানে নুযুল’ রয়েছে। শরয়তের বিধানের কারণ জানা, কোরআনের সঠিক মর্মোদ্ধারের জন্য শানে নুযুল জানা আবশ্যক।

মুফাসসির আলেমদের মতে, কোরআনের আয়াতগুলো দু’ধরনের। এক ধরনের আয়াত আল্লাহ তায়ালা নিজের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ বা উপদেশমূলক প্রসঙ্গ বর্ণনা উপলক্ষে নাজিল করেছেন, কোনো বিশেষ ঘটনা কিংবা কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য নাজিল হয়নি।

আরেক ধরনের আয়াত হচ্ছে, যেগুলো বিশেষ কোনো ঘটনা উপলক্ষে বা কোনো প্রশ্নের উত্তরে নাজিল হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা প্রশ্নগুলোকে সে আয়াতের পটভূমি হিসেবে গণ্য করা যায়। এসব আয়াত নাজিলের আগের সেই পটভূমিকেই তাফসিরের পরিভাষায় ‘শানে নুযুল’ বা ‘সববে নুযুল’ বলা হয়।

উদাহরণ হিসেবে সূরা বাকারার এই আয়াতটি উদ্ধৃত করা যেতে পারে। যেমন-

وَ لَا تَنۡکِحُوا الۡمُشۡرِکٰتِ حَتّٰی یُؤۡمِنَّ ؕ وَ لَاَمَۃٌ مُّؤۡمِنَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکَۃٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَتۡکُمۡ

‘মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যে পর্যন্ত তারা ঈমান না আনে। একজন মুমিন বাদীও একটি মুশরিক নারী থেকে উত্তম, তোমাদের চোখে সে নারী (মুশরিক) যত আকর্ষণীয়ই মনে হোক না কেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ২২১)

 

এই আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার পটভূমিতে নাযিল হয়েছিল। ঘটনাটি হচ্ছে- ইসলাম পূর্ব যুগে ‘এনাক’ নামের এক নারীর সঙ্গে হজরত মারসাদ ইবনে আবি মারসাদ নামক এক সাহাবীর গভীর প্রণয় ছিল। ইসলাম গ্রহণ করার পর হজরত মারসাদ রা. হিজরত করে মদিনায় চলে যান, আর এনাক মক্কাতেই থেকে যায়।

একবার কোনো কাজে হজরত মারসাদ রা. মক্কায় এলে পূর্ব আসক্তির জেরে এনাক তাকে তার সঙ্গে রাত-যাপনের আমন্ত্রণ জানায়।

হজরত মারসাদ রা. তার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ইসলাম তোমার সঙ্গে আমার অবাধ মিলনের পথে প্রাচীর সৃষ্টি করে দিয়েছে। এখন যদি তুমি একান্তই আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে কাছে অনুমতি নিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে পারি।

মদিনায় ফিরে এসে হজরত মারসাদ রা. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সেই নারীকে বিয়ের অনুমতি চাইলেন। এর প্রেক্ষিতে এই আয়াত নাজিল হলো।

যেখানে মুমিনদের মুশরিক নারীদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ( আসবাবুন নুযুল, ওযাহেদী, ৩৮)

এই ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট আয়াতের শানে নুযুল বা আসবাবে নুযুল। তাফসির বোঝার ক্ষেত্রে এ জাতীয় শানে নুযুল জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমন অনেক আয়াত আছে যেগুলো নাজিল হওয়ার পটভূমি বা শানে নুযুল জানা না থাকলে সেগুলোর প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য উদ্ধার করা দুষ্কর। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ১ম খণ্ড, ২৭)

 

আল্লামা যরকাশী রহ.-এর মতে, শানে নুজুলের মাধ্যমে শরিয়তের বিধানের কারণ জানা যায়। আল্লাহ তায়ালা কোন অবস্থায় কোন প্রেক্ষিতে কি বিধান নাযিল করেছেন, তা বোঝা যায়। যেমন, আল্লাহর বাণী- হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাজের কাছে যেও না। (সূরা নিসা, আয়াত, ৪৭৩)

এখানে শানে নুজুল না জানলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে যে, কোরআনের দৃষ্টিতে মদ হারাম। এরপরও মাতাল অবস্থায় তোমরা নামাজ পড়ো না বলার প্রয়োজন কি? বস্তুত এ আয়াতের শানে নুযুলই এই প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে হজরত আলী রা, বলেন, মদ হারাম হওয়ার আগে হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. একদিন সাহাবায়ে কিরামকে খাবারের দাওয়াত দেন। সেখানে খাবার শেষে শরাবেরও ব্যবস্থা করা হয়।

যথারীতি খাবার শেষে সাহাবায়ে কিরাম শরাব পান করেন। এমন সময় নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায়। এক সাহাবী নামাজের ইমামতি করেন। মাত্রাতিরিক্ত শরাব পানে তিনি নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে তিনি নামাজে কিরাত ভুল করে বসেন। তখন এই আয়াত নাজিল হয়। (ইবনে কাসির)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here