বৃহস্পতিবার পালিত হল শহীদ নূর হোসেন দিবস। বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হবার পর থেকে দিবসটিকে ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বৃহস্পতিবার নূর হোসেনের ২৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন সংগঠন।

আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনে নেতৃত্ব দেন দলটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ।

সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আশা করে শহীদ নূর হোসেন যে উদ্দেশে জীবন দিয়ে গেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবার মাধ্যমে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এই ধারা অব্যহত থাকবে।’

বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনে নেতৃত্ব দেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান।

তিনি বলেন, ‘শহীদ নূর হোসেন যে লক্ষ্যে শহীদ হয়েছেন, তা এখনও পূরণ হয়নি, এখনও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আজ গণতন্ত্র অবরুদ্ধ, মানবাধিকার ভুলন্ঠিত হয়েছে।’

এছাড়াও শহীদ নূর হোসেন সংসদ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মৈত্রী, ছাত্রমৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এদিকে, নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা দেশবাসির প্রতি আহ্বান করে বলেন, দেশে যেন কোন ভাবেই আর স্বৈচার মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

ফুল দিতে এসে শহীদ নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ জনতার সামনে দাড়িয়ে ভুল স্বীকার করলে নূর হোসেনের আত্মা শান্তি পাবে এবং তার পরিবারের লোকজনও সুখী হবে।’

তিনি বলেন, আশা করি দুই নেত্রী যদি দেশের মানুষের কথা ভেবে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এক সাথে কাজ করেন তবেই নূর হোসেনের আত্মদান সার্থক হবে। জনগণ নূর হোসেনের হত্যার রায় দিয়েছে, আর তাই এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধি দলীয় নেত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তার বাণীতে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদ নূর হোসেন এক উজ্জ্বল নাম। নূর হোসেনের রক্ত বৃথা যায়নি। তার আত্মাহুতির ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মাটিতে নূর হোসেনের মতো সাহসী মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে, ততোদিন এদেশের গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, নূর হোসেনসহ অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পেয়েছিল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বাবুল, ফাত্তাহসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের রক্তে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল।

নূর হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারন খালেদা জিয়া বিবৃতিতে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে নূর হোসেন একটি অবিস্মরণীয় নাম। তবে যে স্বপ্ন চোখে নিয়ে জীবন উৎসর্গ করে ছিলেন তিনি, সে স্বপ্ন আজো পুরোপুরি সফল হয়নি।

তিনি বলেন, নূর হোসেনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে।

দিবসটির অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ, মিরপুরে নূর হোসেনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ করা হয়।

১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী গণ আন্দোলনের সময় বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাক যাক’ বিক্ষোভ প্রদর্শনের করেন তিনি।

সে সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মু. এরশাদের স্বৈরাচারি আচরন থামানোর জন্য স্বোচ্চার ছিল রাজধানীর রাজপথ গুলো।

রাজধানীর জিরো পয়েন্টে মিছিল চলাকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নূর হোসেন। সেই থেকে এই চত্বরকে নূর হোসেন চত্বর নামকরন করা হয়।

এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আরো শহীদ হয়েছিলেন ক্ষেত মজুর আমিনুল হুদা টিটো ও যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবলু।

১৯৯০ সারের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ডেস্ক০০১

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here