ইউনাইটেড নিউজ ডেস্ক: একটা সময় আমাদের ধরিত্রীকেই বলা হতো বুদ্ধিমান প্রাণীর একমাত্র আবাসস্থল।
কিন্তু কালের বিবর্তনে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার মাধ্যমে আগেই ধারণা করেছিলেন যে মহাবিশ্বে প্রাণ ধারণের মতো পৃথিবীর মতো গ্রহ শুধু একটি নয়, আছে বহু।
বিজ্ঞানীদের সেই ধারণারই প্রমাণ মিললো মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার গবেষণায়।
নাসার ক্যাপলার মহাকাশযান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টানা তিন বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এমনই দাবি করলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিক পেটিগুযরা।
তিনি দাবি করেছেন, গোটা নক্ষত্রপুঞ্জে সূর্যের মতো প্রতি পাঁচটি তারার অন্তত একটির চারপাশে ঘুরছে একটা করে পৃথিবীর মতো গ্রহ। যার আকার থেকে শুরু করে আবহাওয়ার অনেক কিছুই মিল রয়েছে পৃথিবীর সঙ্গে। সে সব গ্রহে না খুব শীত, না বেশি তাপমাত্রা। তাই তরল অবস্থায় জল থাকার সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি।
আর তার ভিত্তিতেই পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন করে আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নক্ষত্রপুঞ্জ জুড়ে এমন গ্রহের সংখ্যা ৪ হাজার কোটির কাছাকাছি।
জানা যায়, ২০০৯ থেকে শুরু হয়েছিল নাসার ক্যাপলার অভিযান। এর মূল উদ্দেশ্য, সৌরজগতের বাইরে নতুন কোনো গ্রহের সন্ধান। ক্যাপলারের তোলা ছবির মাধ্যমে নাসার বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন, সৌরগজতের বাইরের বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের ভর, তাপমাত্রা ইত্যাদি। এই সৌরজগতের বাইরে কোনো গ্রহ ‘হ্যাবিটেবল জোন’ (যেখানে পৃথিবীর মতো প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে) আছে কি না, তা নিয়েও কাজ করছেন এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা। আর সে গবেষণার মাধ্যমেই বেরিয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সোমবারই তার একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন অ্যারিক পেটিগুযরা। তার এই গবেষণা পত্রটি ছাপা হয়েছে প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘দেখা যাচ্ছে প্রাণের সম্ভাবনাময় বহু জায়গাই তৈরি রয়েছে গোটা ব্রহ্মাণ্ডে। সেই প্রাণের সঙ্গে পৃথিবীতে তৈরি হওয়া প্রাণের মিলও থাকতে পারে। পৃথিবীর সব চেয়ে কাছের এমন গ্রহটি আমাদের থেকে ১২ আলোকবর্ষ দূরে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। আর সেটা হলে এখান থেকে খালি চোখেই গ্রহটি দেখতে পাওয়ার কথা।’
এক্সো প্ল্যানেটের (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) খোঁজে গত ২০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। হাজার খানেক এমন গ্রহের সন্ধানও মিলেছিল। তবে ২০০৯ সালে ক্যাপলার অভিযান শুরু হলে মাত্র চার বছরেই আরও সাড়ে তিন হাজার তেমন সদস্যের খোঁজ এনেছে মহাকাশ যানটি। শেষে ২০১২ সালের শীতে কিছু যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য নিজের গতিপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে যানটি। অ্যারিকের এই গবেষণাপত্রের জেরে আবার নতুন করে পৃথিবীর মতন গ্রহের অনুসন্ধান নিয়ে কিছু পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে আশা বিজ্ঞানী মহলে।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতেই একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের দুই বিজ্ঞানী ডেভিড চার্বোনিও এবং কোর্টনি ড্রেসিং। মহাকাশে এমন অনেক তারা আছে যেগুলি তুলনায় কম উজ্জ্বল। বিজ্ঞানের ভাষায় তাদের ‘লাল বামন’ বলা হয়। তাদের বক্তব্য ছিল, মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা লাল বামনের পনেরো শতাংশের চারপাশে পৃথিবীর মতো গ্রহ ঘুরছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী রবী কোপ্পারাপু নিজের গণনায় দেখিয়েছিলেন ৫০ শতাংশ লাল বামনের চারপাশেই রয়েছে এমন গ্রহ। অ্যারিকের গবেষণা অবশ্য বলছে, ২২ শতাংশ তারার আশপাশে রয়েছে পৃথিবী সদৃশ গ্রহ।
অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে, এই গ্রহগুলি আকারে পৃথিবীর সমান হলেও এখনও জানা যায়নি সেগুলির ভর বা পরিবেশের বিষয়ে। সে সব গ্রহের ভূপৃষ্ঠ কেমন? পৃথিবীর মতো পাথর-মাটির নাকি বরফে ঢাকা, তা জানাও সহজ কাজ নয়। গত সপ্তাহেই কয়েক জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যাপলার ৭৮বি নামক এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। তার ঘনত্ব পৃথিবীর মতো, ভূপৃষ্ঠও পাথুরে। কিন্তু তাপমাত্রা এতই বেশি যে সেখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা বেশ কম।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here