লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম বৃদ্ধিজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবারো দালালের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। সদ্য বদলী হওয়া সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল নানামূখী উদ্যোগ নিয়ে কিছু সময়ের জন্য লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসটিকে দালাল মুক্ত করেছিলেন। তাঁর বদলীর পর সহকারী পরিচালক হিসেবে মাহবুবুর রহমানের যোগদানের মধ্য দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে আবারো দালারের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পায়।

২৪ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান টের পেয়ে পাসপোর্টের দালালরা পালিয়ে যায়। এ সময় রাসেল ও ফয়েজ আহাম্মদ নামে দু’জনকে আটক করা হয়। পরে চন্দ্রগঞ্জ বাজার থেকে পাসপোর্ট অফিসের দালাল ফয়েজ আহাম্মদকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালত।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিস প্রতিষ্ঠার পর থেকে রামগঞ্জের বেলাল, যুগির হাটের আবু ছায়েদ, লক্ষ্মীপুরের দেলোয়ার, দালাল বাজারের আবদুল মান্নান, কমলনগরের কামাল মিয়া, মজুপুরের শাহাদাত, রায়পুরের হিমাংশু সাহা, সোহেল শেখ, সোহাগ, সুব্রত সাহা, মান্দারী বাজারের সোলায়মান, লক্ষ্মীপুর চক বাজারের সনজিত ষ্টুডিওর মালিক সনজিত সাহা, চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ফয়েজ আহাম্মদ, তাহের, দালাল বাজারের পলাশসহ আরো কিছু দালাল পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে পাসপোর্টের দালালীতে লিপ্ত হয়।

জানা যায়, বর্তমান সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান গত ৯ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসে যোগদান করে উপ-সহকারী পরিচালক জগদীশ চন্দ্র তাঁতীর মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের চিহ্নিত দালালদেরকে আবারো সক্রিয় করেন এবং চেয়ারম্যানের সত্যায়িত ফরম জমা নেয়া বন্ধ করে দিয়ে দালাল কর্তৃক জাল সীল দ্বারা সত্যায়িত আবেদন গ্রহণ করতে শুরু করেন। যার কারণে আবারো সেবা-প্রার্থীদের পুরোদমে হয়রানী ও দূর্ভোগ শুরু হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অভিযানে আটক হওয়া পাসপোর্ট অফিসের পুরানো দালাল ফয়েজ আহাম্মদ সাংবাদিকদের জানান, সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান যোগদানের পর থেকে পাসপোর্ট অফিসের দালালদের নিকট থাকা ভূঁয়া সিল দিয়ে সত্যায়িত না করলে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করা হয় না। পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের নিকট বিভিন্ন কর্মকর্তার নামীয় ভূঁয়া সীল থাকে। তারাও পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করেন এবং পাসপোর্ট সরবরাহ করেন।

প্রত্যেক দালাল আবেদন সত্যায়িত করার জন্য একজন কর্মকর্তার নামের ভূঁয়া সীল ব্যবহার করেন। পাসপোর্টের দালাল ফয়েজ আহাম্মদ তার জমা দেয়া ফরম সমূহে মোহাম্মদ মমিন উল্যা, প্রধান শিক্ষক, খলিফার হাট উচ্চ বিদ্যালয়, সদর-নোয়াখালী এর নামীয় ভূঁয়া সীল দিয়ে সত্যায়িত করে অফিসে জমা দেন বলে জানান। এভাবে পাসপোর্ট অফিসের প্রত্যেক দালালের আলাদা সীল রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও দালালদের মধ্যে সাপ্তাহিক হিসাব নিকাশ হয়। কোন দালালের কয়টি পাসপোর্ট জমা হয়েছে তা সীল দেখে চিহ্নিত করে টাকার হিসাব করা হয়।

পাসপোর্টের দালাল ফয়েজ আহাম্মদ আরও জানান, পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী আল মামুন ও মোঃ শাহীন সহকারী পরিচালকের জন্য তাদের কাছ থেকে প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য ১০৫০ টাকা ঘুষ হিসেবে নেন। গত সপ্তাহে ২৬টি পাসপোর্ট করে দেবার জন্য পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী আল মামুনকে ২৭ হাজার তিনশ‘ টাকা নগদ পরিশোধ করেন। চলতি সপ্তাহে ১৮টি পাসপোর্টের জন্য চন্দ্রগঞ্জ শাহীন হোটেলের বিকাশ নম্বর থেকে আল মামুনের মোবাইল ফোনের ০১৬৮-৬৬৫৬৮৮৬ বিকাশ নম্বরে পনের হাজার টাকা প্রদান করেছেন বলে জানান।

লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক জগদীশ চন্দ্র তাঁতী পাসপোর্টের সকল দালাল নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানা যায়। তিনি পাসপোর্ট অফিসের একেক জন কর্মচারীকে কয়েকজন দালালের নিকট থেকে ঘুষের টাকা আদায় এবং হিসাব নিকাশ রাখার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। সে অনুযায়ী কর্মচারীরা নিজেদের অধিনস’ দালালদের নিকট থেকে ঘুষের টাকা আদায় করেন। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার এসব টাকার ভাগ বাটোয়ারা হয় বলে জানা যায়।

রবিবার লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে পাসপোর্ট করতে আসা কয়েক জনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ৭ দিন, ১৫ দিন কিংবা ৩০ দিন সময়ের মধ্যে একটি পাসপোর্ট করতে হলে দালালদেরকে ন্যূনতম ৭৫০০ টাকা থেকে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। কেউ কম খরচে পাসপোর্ট করার জন্য নিজে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে এবং ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে গেলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা জন্মনিবন্ধন সনদ অনলাইনে নেই, ফরম ফটোকপি করা, ঠিকমত সত্যায়িত করা হয়নি, সত্যায়নকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে আসতে হবে- ইত্যাদি অজুহাত দিয়ে আবেদন ফেরত দেন। পরবর্তীতে একই ফরম দালালদের মাধ্যমে পাঠানো হলে তা গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে সেবা গ্রহীতাগণ এসব ঝামেলায় না জড়িয়ে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে বাধ্য হন বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান ও উপ-সহকারী  পরিচালক জগদীশ চন্দ্র তাঁতীর সাথে যোগাযোগ করে তাদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানান, দালালদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here