রোডমার্চকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিএনপি ও জামায়াতসহ চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ২৬ ও ২৭ নবেম্বর রাজধানী ঢাকা থেকে পীর খানজাহান আলীর পূণ্যভূমি শিল্পনগরী খুলনার উদ্দেশ্যে এই রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন চারদলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। চারদলীয় জোটসহ সমমনা ১৭টি দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও কর্মী সমর্থকরা রোডমার্চে বেগম জিয়ার গাড়ি বহরে সঙ্গী হবেন। রোডমার্চ শেষে ২৭ নবেম্বর বিকেলে খুলনার ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে মহাসমাবেশে ভাষণ দেবেন তিনি। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ, অযোগ্য, তাবেদার, ফ্যাসিবাদী সরকারের অবিলম্বে পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা জোটের এই কর্মসূচি সর্বাত্মক সফল করতে এখন চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। বিএনপি এবং জামায়াতসহ সকল অঙ্গ সংগঠন এবং সহযোগী সংগঠন ইতোমধ্যে সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও ইউনিট পর্যায়ে একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে। রোডমার্চকে স্বাগত জানাতে কে কার থেকে সুন্দরভাবে নিজ এলাকা সাজাতে পারে তাই নিয়ে বিএনপির থানা কমিটিগুলোর মাঝে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার কারণে নগরী সাজাতে নিত্য নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেউ বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিশাল বিলবোর্ড ভাড়া করছেন, কেউ সড়কের দু’পাশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, সড়ক দ্বীপসমূহে কাঠের ফ্রেমে কাপড়ের তৈরি কাটাউট স্থাপন করছেন। আবার কেউবা সম্পূর্ণ সড়কই মরিচবাতি দিয়ে আলোকিত করছেন। সব মিলিয়ে রোডমার্চ উপলক্ষে অপরূপ সাজে সাজানো হচ্ছে মহানগরী খুলনাকে। জোটের প্রধান শরীক জামায়াতের প্রস্তুতিও চলছে পুরো মাত্রায়। এদিকে খুলনায় চারদলীয় জোটের রোডমার্চ ও মহাসমাবেশে থাকবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হবে প্রায় ৭০০ পুলিশ এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য। রোডমার্চের বহরে আসা যানবাহন ও মহাসমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের যানবাহন রাখার জন্য চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ২৬ নভেম্বর সকালে বেগম খালেদা জিয়া রোডমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। তিনি যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতু পার হয়ে পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ হয়ে যশোর পৌছে রাত্রি যাপন করবেন। সকালে যশোর থেকে রওনা হয়ে বাগেরহাটে পীর খানজাহান আলী (রঃ) এর মাজার জিয়ারত করবেন। পথে তিনি একটি জনসভা এবং তিনটি পথসভা করবেন বলে জানা গছে। সেখান থেকে খুলনা ফিরে সার্কিট হাউজে বিশ্রাম নেবেন। বিকেলে এখানে অনুষ্ঠিত হবে বিভাগীয় মহাসমাবেশ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি হবে খুলনায় খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় সমাবেশ। এর আগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল তিনি খুলনার শিববাড়ী মোড়ে ব্যর্থ অযোগ্য আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন, খুন, দখল, হামলা, মিথ্যা মামলা, নগ্ন দলীয়করন, চাল-ডাল-তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্রমূল্যের লাগামহীর উর্ধ্বগতি , আসহনীয় বিদ্যুৎ সংকট ও অব্যবস্থাপনা, সীমাহীন দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সরকারি সম্পাদ লুট, ছাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের প্রতিবাদে আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দিয়েছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার খলনায় আগমন উপলক্ষে বিরোধীদলের আন্দোলন-সংগ্রামে সংযুক্ত করতে দেশের জাতীয় সমস্যা সমূহের সাথে খুলনার গণমানুষের সংযোগ ঘটাতে প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও শ্লোগানকে সামনে রেখে এখন বিএনপির প্রচার কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জেও ‘চলো, চলো খুলনা চলো’ শ্লোগানের মাইকিংএ চারদলীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনের ভোট প্রার্থনার মতোই জনসংযোগ করছেন। গত মঙ্গলবার থেকে মহনগরীর বিভিন্ন স্থানে মাইকিং প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে মঞ্চ তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। ২৫ নভেম্বরের মধ্যে মঞ্চ তৈরীর সমগ্র কাজ সম্পন্ন হবে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাথে রোডমার্চ সফর সঙ্গী হিসেবে আসা প্রায় ৩ হাজার নেতৃবৃন্দের আবাসন ব্যবস্থায় পূর্বপ্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। ৫টি পর্যায়ে ভাগ করে নগরীর অভিযাত হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদিকে খুলনায় চারদলীয় জোটের রোডমার্চ ও মহাসমাবেশে থাকবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হবে প্রায় ৭০০ পুলিশ এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য। রোডমার্চের বহরে আসা যানবাহন ও মহাসমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের যানবাহন রাখার জন্য চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। কেএমপির স্পেশাল ব্রাঞ্চের সহকারী কমিশনার মোল্লা আজাদ হোসেন জানান, খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে মহাসমাবেশস্থলে কেএমপির তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। মঞ্চের সামনে ও পেছনে থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। মাঠের চারপাশে পোষাকধারী পুলিশ এবং সাদা পোষাকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা থাকবেন। মাঠের পাশের উচু ভবনের ছাদ এবং স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও থাকবে পুলিশ। তিনি জানান, রোডমার্চের রুট নির্বিঘ্নে রাখতে নগরীর খানজাহান আলী থানার পথেরবাজার এলাকা থেকে শুরু করে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও উচু ভবনগুলোর ছাদে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। সহকারী কমিশনার জানান, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, রূপসা সেতুর নিচে, জোড়াগেট এলাকা এবং গল্লামারী সেতুর ওপারে যানবাহন রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব সদস্যরা নগরীতে টহল দেবে। মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, রোডমার্চ ও মহাসমাবেশের শৃঙ্খলার জন্য তাদের দলের প্রায়  এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবে। সার্কিট হাউজ মাঠের পাশাপাশি পাশের জেলখানা ঘাট, জিলা স্কুল মোড়, টুটপাড়া কবরস্থান মোড় এবং ডাকবাংলো মোড় পর্যন্ত মাইক দেয়া হবে। ২৬ নভেম্বর রাতে খুলনায় রোডমার্চে আসা গাড়িগুলো নগরীর বিভিন্ন পার্ক এবং স্কুল-কলেজের মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যতিক্রমী প্রচারনা ঃ শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিশালাকৃতির প্লাকার্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে গাড়ি। দুপাশে পত পত করে উড়ছে দুটি পতাকা-একটি বাংলাদেশের, অন্যটি বিএনপির। মাইকে বাজছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোটের খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চ ও ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানের মহাসমাবেশ সফল করার আহবান। ঘোষকের বজ্রকন্ঠ উচ্চারন করছে- ‘এ সরকার তাবেদার/ অধিকার নেই ক্ষমতায় থাকবার, এই মূহুর্তে দরকার খালেদা জিয়ার সরকার, বাংলাদেশে দরকার/ জাতীয়তাবাদী সরকার, তারেক জিয়া বীরের বেশে/ আসবে ফিরে বাংলাদেশে।’ গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমান যানের প্রচারনা। ছুটছে ফুলতলার আটরা গিলাতলা, দামোদর, জামিরা বাজার, ডুমুরিয়ার ধামালিয়া, শাহপুর বাজার, সদর এলাকায়, যশোরের অভয়নগর, কেশবপুর, নওয়াপাড়া, তালতলায়। চলার পথে শত শত নারী পুরুষ শিশু গভীর আগ্রহে তা পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রচারাভিযানের আয়োজক বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জামিরা ইউপি চেয়ারম্যান ড. মামুন রহমান জানান, ২৭ তারিখ সকালে রোডমার্চের গাড়িবহর যশোর থেকে খুলনা আসার পথে ফুলতলায় তার এলাকার অর্ধ সহস্রাধিক নারী সুসজ্জিত হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবে। বিকালে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি অংকিত গেঞ্জি গায়ে সহস্রাধিক লোক মহাসমাবেশে অংশ নেবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শিমুল খান/খুলনা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here