রোগী দেখেন ডাক্তার প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক নিউজ :: সুখী দেশ হিসেবে খ্যাতি আছে ভুটানের। প্রাণ-প্রতিবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ‘বর্জ্র্য ড্রাগনের দেশ’। এমন দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনন্য দায়িত্বশীলতা আশা করা যেতেই পারে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারে রোগী দেখে সময় কাটান প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। অন্য চিকিৎসকদের মতোই তিনি এদিন কর্মব্যস্ত থাকেন।

চিকিৎসক থেকে রাজনীতিতে আসা লোটে এক রোগীর মূত্রনালির অপারেশন করে সবে ফিরলেন। হাসপাতালের সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। আলাদা করে লোটের দিকে কারো নজর নেই। তিনি যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী তা বোঝার কোনো উপায় নেই। অ্যাপ্রন পরিহিত লোটে হাসপাতালের করিডরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ন্যাশনাল রেফারেল হাসপাতালের শনিবারের চিত্র এটি।

লোটে বলছিলেন, ‘হাসপাতালে কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আমার মানসিক চাপ কমে। ছুটির দিনে কেউ গলফ খেলেন, কেউ আর্চারি খেলেন; আর আমি চিকিৎসাসেবা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’

হাসপাতালে লোটের ৪০ বছর বয়সী রোগী বুমথাপ বলেন, ‘আমি দেশের সেরা চিকিৎসক ও প্রধানমন্ত্রীর অধীনে চিকিৎসায় আছি, ফলে অনেক বেশি স্বস্তি বোধ করছি।’ সাড়ে সাত লাখ মানুষের দেশ ভুটানে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসান হয়। ২০১৩ সালে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন লোটে। তখনকার নির্বাচনে তাঁর দল পরাজিত হয়। রাজা জিগমে খেসার নামগিল ওয়াংচুকের আদেশে লোটের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল ভুটানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে তিনি জয়ের মুখ দেখেন। নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী।

রোগী দেখেন ডাক্তার প্রধানমন্ত্রী

লোটে চিকিৎসাশাস্ত্রে বাংলাদেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন প্রতি শনিবার রোগী দেখে তাঁর সময় কাটে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ইন্টার্ন এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর পরিবারকে সময় দেন রবিবার করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও লোটের চেয়ারের পেছনে একটি অ্যাপ্রন ঝোলানো আছে। তাঁর ভাষ্য, এ অ্যাপ্রন সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা আমাকে মনে করিয়ে দেয়। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য রোগীদের সরাসরি কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয় না।

বৌদ্ধপ্রধান ভুটান এরই মধ্যে নিজেকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চেয়ে দেশটি সুখের প্রতি বেশি দৃষ্টি দিয়েছে। এ কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম উদ্যোগ হলো পরিবেশ সুরক্ষা করা। সাংবিধানিকভাবে দেশের মোট আয়তনের ৬০ শতাংশের বেশি বন আছে। এটি পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে। বর্তমানে দেশটিতে একজন পর্যটককে ২৫০ ডলার দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। রাজধানী থিম্পুতে নেই কোনো ট্রাফিক লাইন।

রোগী দেখেন ডাক্তার প্রধানমন্ত্রী

সম্প্রতি দেশটি গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাসহ অনেক সংক্রামক রোগ নির্মূলে সফলতার মুখ দেখেছে। তবে প্রাণঘাতী মাদক ও ডায়াবেটিসজনিত রোগীর হার বেড়েছে। লোটে বলেন, ‘আমাদের এখন ধীরে ধীরে মাধ্যমিক এবং তৃতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার ওপর নজর দেওয়া উচিত।’

লোটের কাছে রাজনীতি অনেকটা চিকিৎসাসেবার মতো। তাঁর ভাষায়, ‘হাসপাতালে আমি রোগীদের স্ক্যান করি, সেবা দিই। সরকারে আমি রাজনীতির স্বাস্থ্য স্ক্যান করি ও সেটিকে আরো ভালো করার চেষ্টা করি এবং করে যাব।’ তিনি আরো বলেন, ‘সপ্তাহের অন্যান্য দিনে কাজের জন্য আমি যখন গাড়ি চালাই, তখনই আমার হাসপাতালে যেতে ইচ্ছা করে।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here