নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপিতে এখন ঐক্যের সুর বাজছে। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে চলছে ভাঙনের খেলা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, কাজের ভাগ-বাটোয়ারা, আধিপত্য বিসত্মারসহ নানা কারণে দলের ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দলে দু’গ্রম্নপের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। অপরদিকে, বিএনপিতে ঐক্য দেখা দেয়ায় রূপগঞ্জে বিএনপি এখন শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রাপ্ত তথ্যমতে, রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, কাজের ভাগ-বাটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’গ্রম্নপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে থানা আওয়ামী লীগের তৈরী হয়েছে দূরত্ব। অন্যদিকে নামধারী ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি আর জমি দখলের কারণে বেকায়দায় পড়েছে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।
জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগে অছাত্র আর বিবাহিতের সংখ্যাই বেশি। সম্প্রতি উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা শফিকুল মোল্লা ও মুড়াপাড়ায় যুবদল নেতা নজরুল হত্যার ঘটনায় অভিযোগের আঙুল আওয়ামী লীগের দিকেই। এ কারণে ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারা।
অপরদিকে উপজেলায় পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাংগঠনিক ব্যক্তিরা সক্রিয় থাকায় তারা দু’ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়ার অনুসারীদের মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। থানা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে দু’গ্রুপে বিভক্ত। যুবলীগের এক গ্রুপ সংসদ সদস্যদের পক্ষে কাজ করছে, আরেক পক্ষ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করছে বলে কর্মীরা জানিয়েছে।
একই অবস্থা ছাত্রলীগের মধ্যেও। থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তাবিবুল কাদির তমাল উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষের অনুসারী। সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন এমপির সমর্থিত।
দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্দ্ব রূপগঞ্জের ওয়ার্ড পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। গত দু’বছরে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি দু’গ্রুপই পৃথকভাবে পালন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন ডাকসাইটের নেতা দুঃখপ্রকাশ করে জানান, আওয়ামী লীগের এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। গত এক যুগ ধরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের কমিটি হয়নি।
ওদিকে, গত দুই বছরে রূপগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের থানায় তদবির, জমি দখল থেকে শুরম্ন করে হেন কর্মকান্ড নেই যা হচ্ছে না। রূপগঞ্জে অস্ত্রধারী ক্যাডাররা এখন যুবলীগ আর ছাত্রলীগের কর্মী বনে গেছে বলে ত্যাগী নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। তাছাড়া এসব অস্ত্রধারী ক্যাডাররা এমপি গাজীর নিতান্তই কাছের লোক বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু একটি অংশ বিচ্ছিন্নভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ক্যাডার তারা আওয়ামী লীগের কেউ নন। তারা গাজী লীগ করে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের কোন্দলের সুযোগে বিএনপি মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে। থানা বিএনপির প্রভাবশালী দু’নেতা জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের মধ্যে ঐক্য হওয়ায় বিএনপির মাঠ পর্যায়েও ঐক্য ফিরে এসেছে। থানা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আসাতে বিএনপিতে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। রূপগঞ্জে বিএনপি এখন শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেন।
রূপগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিএনপিতে এখন কোনো কোন্দল নেই। সবাই এক হয়ে কাজ করছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ