রূপগঞ্জে গত এক মাসে পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে অর্ধকোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। উপজেলার ১৬টি ব্যাংক নিরাপত্তা চেয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে একাধিকার বৈঠক করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জনসচেতনতায় মাইকিংও করা হয়েছে। তারপরও থামছে না ছিনতাই। ব্যবসায়ীরা টাকা নিয়ে গন্তব্যে যেতে অসহায় হয়ে পড়েছেন। একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতংক ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা।
শিল্পাঞ্চল খ্যাত রূপগঞ্জের সবগুলো ব্যাংকেই প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে টাকা লেনদেন করতে এসে পড়ছেন ছিনতাইকারীদের কবলে। গত একমাসে রূপগঞ্জের ভুলতা, মুড়াপাড়া, রূপসী এলাকা থেকে ৮টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে ব্যাংক, ব্যবসায়ী ও পুলিশ সূত্র জানায়। তবে পুলিশ বলছেন ছিনতাইকারীদের ধরতে সোর্স নিয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতায় মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলার ভুলতা এলাকার ১১টি ব্যাংক কর্মকর্তারা থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও অসযোগিতা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছিনতাইরোধে পুলিশ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা স্থানীয় সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিকবার সভা করেছেন। কোন ফল হচ্ছে না। জানুয়ারি মাসেই ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মারধর করে টাকা, মোবাইলসেট রেখে বিভিন্নস্থানে নামিয়ে দিচ্ছে। ৩১ জানুয়ারি ঢাকা ব্যাংকের ভুলতা শাখা থেকে ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় মানিক মিয়ার ছেলে ইউনুছ আলী ও মকবুল হোসেন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তাদের হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। টাকা ও মোবাইলসেট রেখে সোনারগাঁও উপজেলা বসত্মল এলাকায় নামিয়ে দেয়। একই দিন ইসলামী ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে মনির নামক এক ব্যবসায়ী ভুলতা তাঁতবাজারের সামনে এলে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তাকে আটকের চেষ্টা করে। এ সময় ডাক-চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে আবারো ইসলামী ব্যাংকে চলে যায় বলে ব্যাংক ম্যানেজার মোঃ জাকির হোসেন জানান।
গত ২৩ জানুয়ারি দুপুর ১টায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ভুলতা শাখা থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে রিকশা যোগে গাবতলীর নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বাবু ও আবুল কালাম কালুর কাছ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা ও মোবাইলসেট ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তাদের মাথায় পিসত্মল ঠেঁকিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁও উপজেলার জাঙ্গাল এলাকায় নামিয়ে দেয়।
গত ১৯ জানুয়ারি একই কায়দায় উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকা থেকে রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্টি অফিসের দলিল লেখক মোবারক হোসেন হিটোর প্রাইভেটকার চালক রফিকুল ইসলামকে তুলে নিয়ে দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তার মাথায় আঘাত করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা এলাকায় নামিয়ে দেয়। হাজী এখলাছউদ্দিন ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল্লাহ ভুঁইয়াকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এভাবেই রূপগঞ্জে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ছিনতাই করতে একটি চক্র।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার আহম্মেদ জানান, ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে যারা এ অপকর্ম করছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। রূপগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক মামলা হয়েছে। তন্মধ্যে ৪টি মামলা নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদনত্ম চলছে।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ্ মোঃ আওলাদ হোসেন জানান, ছিনতাইকারীর এ চক্রটিকে ধরতে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য সভা ও এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সাইদুর রহমান জানান, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারী চক্রটিকে ধরতে একাধিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ