আব্দুল খালেক রিয়াদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার অষ্টম ধাপে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে আরও ৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষাজীবনের সব ক’টিতেই প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স’ানসহ মেধা তালিকার ১ম, ২য় ও ৩য় স’ান অধিকারীদের বাদ দিয়ে শিক্ষাজীবনের মাত্র একটিতে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত ৮১তম প্রার্থী ওলামালীগ সভাপতিসহ তুলনামূলক কম যোগ্য প্রার্থীদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বোরবার সকালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩৮তম সিন্ডিকেটে এসব শিক্ষকের নিয়োগ চূড়ান- করা হয়।
নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন, রাজশাহী জেলা শাখা ওলামা লীগের আহবায়ক ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতিষ্ঠা করা বায়তুল আমান মসজিদের ইমাম মো. বারকুল্লাহ বিন দূরুল হুদা (শিক্ষাজীবনের মাত্র ১টিতে ১ম শ্রেণী), বিভাগের আওয়ামীপন’ী শিক্ষক ড. আব্দুল হামিদের ছোট ভাই সারওয়ার আলম, আব্দুল মান্নান, গ্রেস দিয়ে পাস করা মো. হাফিজুর রহমান, মোখতার হোসেন, মাসুদ আলম ও হাবিবুর রহমান। অন্যদিকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স’ান অধিকারী হয়েও নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হন হাসিনুর রহমান, ইয়াকুব শরীফসহ অনেক মেধাবী প্রার্থী।
জানা যায়, গত জোট সরকারের আমলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শুণ্য ৬টি পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর প্রায় ১৫৬জন প্রার্থী আবেদন করে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ১৪৬জন প্রার্থীর আবেদনপত্র গৃহিত হয়। এদের মধ্যে ৮০জন প্রার্থীর শিক্ষা জীবনের সবকটিতেই প্রথম বিভাগ ছিল। এ নিয়ে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে সর্বশেষ গতকাল রোববার পর্যন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২৭, ৪২৮, ৪২৯, ৪৩০, ৪৩১, ৪৩৫, ৪৩৭ ও ৪৩৮তম সিন্ডিকেটে ৩৩টি বিভাগের ১৩১টি পদের বিপরীতে ২৩৭জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হলো।
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) রাবিতে সব শ্রেণীর নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পদের তুলনায় দ্বিগুণ জনবল নিয়োগ, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সময়সহ বিভিন্ন সময়ে টেন্ডার ছাড়াই দলীয় লোকদের দিয়ে ইচ্ছেমত কাজ করানো, পরিবহন, প্রকৌশল, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতি বর্তমানে দাড়িয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
বিশালাকারের এ বাজেট ঘাটতির কারণে বর্তমানে চাকরি থেকে অবসর নেয়া শিক্ষক কর্মকর্তাদের পেনশনের টাকা দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৮ কিসি-তে। তাছাড়া নতুন করে সিন্ডিকেটে আইন করে বিভাগ ও দপ্তরগুলোর কোন অনুমতি ছাড়াই বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর দলীয় লোকদের দিয়ে সাক্ষাতকার পর্ব শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও প্রায় দুই থেকে আড়াই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়োগের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও কোন কাগজ হাতে পাওয়ায় এ বিষয়ে তিনি কোন কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি প্রফেসর মুহম্মদ নুরুল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিলেকশান বোর্ড নিয়োগের জন্য যাদেরকে প্রস-াব করেছিল সিন্ডিকেটে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত: ভিসি প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে সিলেকশান বোর্ডে এক্সটারনাল হিসেবে ঢাবি’র ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আব্দুর রশিদ, প্রোভিসি প্রফেসর মুহম্মদ নুরুল্লাহ, বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আবুল খায়েরসহ আওয়ামীপন’ী বেশ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য সিলেকশান বোর্ডে ছিলেন।