সম্ভব্য নাশকতার আশঙ্কায় হঠাৎ পুলিশের ঝটিকা অভিযানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শাখার ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি আশরাফুল আলম ইমনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাত ৮ টার দিকে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী অক্টোয় মোড় নামক এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত অপর দুই শিবির কর্মী হলেন ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম ও একই বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। বৃহস্পতিবার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

এদিকে শিবিরের হামলার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসের প্রতিটি আবাসিক হল ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অপরদিকে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমনকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯ টার দিকে বিনোদপুর, কাজলা, মেহেড়চন্ডী, কাঁটাখালি, ধরমপুর, মির্জাপুর, তালাইমারি সহ বেশ কয়েকটি স্থান থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিবির নেতাকর্মী বিনোদপুর এলাকায় মিলিত হয়ে দফায় দফায় জঙ্গি মিছিল বের করে। এসময় চারদিকে আতঙ্গ ছড়িয়ে পরে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে।

এরপরই পুলিশ রাতভর সাঁড়াশী অভিযান চালায় পুরো রাজশাহী নগরী ও এর আশে-পাশের এলাকায়। তবে কোন শিবির কর্মীকে আটক করতে পারেনি।

জানা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নসাৎ করার চেষ্টায় এবং জামায়াতের উধ্বর্তন নেতাদের মুক্তির দাবির কৌশল আটানোর পরিকল্পনা সভা করছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী কাজলার এলাকার অক্ট্রয় মোড়ের চেতনা নামে একটি ছাত্রাবাসে শিবিরের সেক্রেটারিসহ ৩০-৪০ নেতা-কর্মী। গোয়েন্দা সংস্থার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মতিহার থানা পুলিশের এসআই শামসুজ্জোহার নের্তৃত্বে একটি অভিযান দল পুরো ছাত্রাবাসটিকে ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশের সাথে শিবিরের সেক্রেটারির ধস্তাধস্তিহয়। এই সুযোগে শিবিরের অন্যন্য নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যেতে সড়্গম হয়। পরে সেখান থেকে পুলিশ শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আশারফুল ইসলাম ইমন, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বিভাগের শহিদুল ইসলাম ও একই বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর আটক করে পুলিশ।

এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে-পাশের এলাকা গুলো থেকে শিবিরের নেতা-কর্মীরা বিনোদপুর বাজারে এসে জড়ো হতে থাকে। তারা শিবিরের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে ও অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে রাত ৯ টার দিকে জঙ্গি মিছিল বের করে। মিছিলটি বিনোদপুর মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে বের হয়ে বিনোদপুর প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করে। পরে প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ এসে ধাওয়া করলে শিবির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকবর হোসেন  জানান, শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমনের নের্তৃত্বে শিবির নেতাকর্মীরা কাজলা এলাকায় সংগঠিত হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় চলাশী ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। পরে কাজলার চেতনা ছাত্রাবাসে গোপন মিটিং চলাকালীন অবস্থায় তাকে আটক করা হয়। আটকৃতদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন মামলা না থাকলেও সম্প্রতি রাজশাহী ও এর আশে-পাশের থানায় মামলা থাকায় তাদেরকে আদালতের মাধমে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে শিবিরের সেক্রেটারিকে গ্রেপ্তারের খবরে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছে। মিছিলটি মাদার বকশ আবাসিক হল থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সোহরাওয়াদ্দি হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আহমদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হোসেন বিপু জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নসাৎ করতে তারা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার একটি অপচেষ্টা করছিল। আর তাদেরকে আটকের মাধ্যমে ফারুক হত্যা কা-সহ  জামায়াত-শিবিরের হায়নার বিচার করা সম্ভব হবে তারা দাবি করেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আকবর হোসেন/রাজশাহী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here