ডেস্ক রিপোর্ট:: রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মরাবিলা গড়াই নদীর পারে ফসলি জমিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সিসা তৈরির কারখানা। পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই সিসার প্রভাবে গত ১ মাসে ১০টি গরু মারা গেছে। সিসা তৈরির কারখানার বর্জ্যে হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য।
জানা গেছে, কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া ও বালিয়াকান্দি উপজেলার মরাবিলা এলাকায় গত ৪ মাস আগে সিসা তৈরির এই কারখানাটি স্থাপন করা হয়। প্রায় ৩০ শতাংশ জমিতে এটি স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরোনো ব্যাটারি কিনে এখানে এনে, ভেঙে প্লাস্টিক আলাদা করে সিসা সংগ্রহ করা হয়। রাত ১১টার দিকে ছাই পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বালিয়াকান্দি উপজেলার মরাবিলা ও কালুখালী উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের সিসা তৈরির কারখানায় পাঁচ-ছয়জন নারী পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। কারখানার ভেতরে পুরোনো ব্যাটারি, ভেঙে ফেলা ব্যাটারির স্তুপ। কারখানার উঠানে গর্ত করে মাটির চুলার মতো চুল্লি বানানো হয়েছে।
দাড়িয়াপুর এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এই কারখানার জন্য কৃষি ও গোচারণভূমি, জলাশয়ের পানি ও মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কোনো বর্জ্য শোধানাগার (ইটিপি) ছাড়া উন্মুক্তস্থানে ব্যাটারি গলানোর ফলে সিসাসহ দূষিত অন্যান্য বর্জ্য ছড়িয়ে আশপাশের ঘাস ও পানিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সেই পানি ও ঘাস খেয়ে অন্তত ১০টি গরু মারা গেছে, অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরও ১০-২০টি গরু।
তবে কারখানার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শাজাহান খান বলেন, ব্যাটারি ভেঙে পাওয়া প্লাস্টিক ও সিসা আলাদা করে রাখা হয়। পরে রাতে ব্যাটারির ছাই আগুনে পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ব্যাটারি ভেঙে সিসা সংগ্রহ ও পুড়িয়ে সিসা তৈরির জন্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। গলিত অ্যাসিডগুলো আমরা ড্রামে বাজারজাত করি। এসব আশপাশের কোনো জমিতে ফেলছি না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক সরদার বলেন, সিসা গলালে এর ধোঁয়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশতে পারে। সিসা গাছপালা ও ঘাসের সঙ্গেও মিশে যায়। যা খেলে গরুসহ গৃহপালিত পশুর পাকস্থলীতে সমস্যা তৈরিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। ব্যাটারির সিসার বিষক্রিয়ায় গৃহপালিত পশুর মৃত্যুও হতে পারে।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটোন বলেন, সিসা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বাতাস ও পানির সঙ্গে মিশলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ এটি বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।