স্টাফ রিপোর্টার :: শহরের কোলহল থেকে একটু দুরে, রাজধানী উত্তরা, ১৫ নম্বন সেক্টর, দিয়াবাড়ির ‘আর.পি.সিটি’ এলাকায় বসেছিল স্নায়ূবিকাশ ঘাটতি সম্পন্ন সুবর্ণ শিশুদের মিলনমেলা। প্রবেশ মুখেই চোখে পড়ে সাড়ি সাড়ি লাল-সবুজ আর নীল-হলুদের পতাকা দিয়ে সাজানো সবুজ মাঠ। যেখানে একদিকে চলছিল শিশুদের বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা, অন্য দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পাশাপাশি চলছিল খানাপিনা। সুইড বাংলাদেশের ৫ শতাধিক স্কুল থেকে আসা ৩ হাজারের অধিক বিশেষ শিশু ও তাদের তত্ত্বাবধায়কদের উপস্থিতিতে চলে এই বার্ষিক আনন্দ সমাবেশ-২০১৯।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসতে থাকে শিশুদের দল। বিশেষ শিশুদের এই আনন্দ সমাবেশের আয়োজন করে ‘আহাম্মেদ আব্দুর রহমান ট্রাষ্ট’। সুবর্ণ নাগরিক আহম্মেদ আব্দুর রহমান ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর জেলা সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ আহমেদ ভূইয়া, বিশেষ অতিথি ছিলেন সুইড বাংলাদেশের সভাপতি জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন ও ডা. তাসকেরা খানম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সুলতানা মেহজাবিন টুসি ও সোহেল রানা।
সমাবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সরকার এই শিশুদের ‘গোল্ডেন সিটিজেন’ বা সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করায়, সমাবেশে তাদের প্রত্যেককে ‘গোল্ড মেডেল’ পড়িয়ে বরণ করা হয়। আনন্দ সমাবেশে অংশ নেয়া প্রতিটি শিশুর পরণে ছিল সবুজ রঙের টিশার্ট ও গলায় গোল্ডমেডেল। ম্নায়ূবিকাশ ঘাটতি সম্পন্ন শিশু তাসনীম তাহেরের মা বলেন, সে এখানে এসে খুব খুশী, যে কারণে তাকে স্থির রাখা যাচ্ছে না।
অন্য একজন বিশেষ শিশু বলেন, আমার নাম রাকা, সে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ এবং নিজেও নাচার চেষ্টা করছে। এই সব শিশুর মধ্যে আছে নৃত্যশিল্পী, অভিনয় শিল্পী এমন কি তারা খেলাধুলাতেও দক্ষ। সমাবেশে আসা একজন শিক্ষক বলেন, আমি দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ এই শিশুদের নিয়ে কাজ করছি। এই শিশুরা সবকিছুই করতে পারে। তাদের বোঝার মতো বোধ-বুদ্ধি কেবল আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নেই। এই শিশুরা তার খেয়াল-খুশি মতো কাজ করে। অন্যের কথায় তারা চালিত খুব কম হয়। পৃথিবীর জটিলতা আর কুটিলতা তাদের স্পর্শ করতে পারে না। এরা অনেকে বয়সে বড় হয়ে গেলেও এদের স্বভাব-চিন্তা শিশুদের মতই থাকে।
অন্য একজন অভিভাবক রাহেলা বেগম বলেন, আমার বাচ্চা অনেক বেশি চঞ্চল ছিল, এখন সে সি’র হয়েছে। ওর রং করতে পছন্দ করে। আর যাকে সে পছন্দ করে না তাকে সে বিরক্ত করে। আর কাউকে পছন্দ হলে সে খুব খুশি হয়, হাসে, তার কাজ দেখানোর চেষ্টা করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে অনেক কোটিপতি মানুষ আছেন, কিন্তু এই সব মহৎ কাজে তাদের অর্থ ব্যয় করার মতো তাদের মানসিকতা নেই। আমাদের দেশে এই সূবর্ণ নাগরিকদের পেছনে রেখে এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়, ফলে স্নায়ূবিকাশ ঘাটতি শিশুদের এগিয়ে নিতে সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়।