জহুরুল ইসলাম জহির, রংপুর

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর নিয়োগে কোটা দাবি নিয়ে শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখি সংঘর্ষে ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এতে এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার এমপি, সাংবাদিক-পুলিশসহ অন-ত ৩৫ জন আহত হয়। পুলিশ পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪ রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এঘটনায় হাসপাতালে রোগিরা চরম আতংকিত হয়ে পড়েন। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস’ল থেকে আবু বক্কর নামের এক যুবককে আটক করেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ এবং হাসাপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর ১৮১ জন নিম্নপদের কর্মচারী নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। এরই মধ্যে ওই নিয়োগে কোটা দাবি নিয়ে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয়পার্টির সাথে চরম বিরোধে জড়িয়ে পড়ে কর্তৃপক্ষ। কোটা দাবি কারীরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগের অভিযোগ তোলে। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ কোটা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

শনিবার সকাল থেকেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মহম্মদ এরশাদের ভাতিজা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আসিফ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে নির্বাচনী এলাকা গঙ্গাচড়া থেকে ৫ টি ট্রাকে লাঠিসোটা নিয়ে কয়েক হাজার লোক হাসাপাতাল ক্যাম্পাসে এসে কোটার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় তারা হাসাপাতালের পরিচালককে দুর্ণীতিবাজ দাবি করে তার অপসারণ দাবি করে। এসময় সবার হাতেই দেড় থেকে দুই হাত বিশিষ্ট হাজার হাজার লাঠি ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, আসিফ শাহরিয়ার এমপির নেতৃত্বে মিছিলটি হাসাপাতালে থেকে কলেজের দিকে যেতে থাকলে গেটের সামনে সাংবাদিকরা ছবি তুলতে যায়। এসময় এমপি আসিফ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের উপর লাঠি দিয়ে হামলা করে জাতীয় পার্টির কর্মীরা। এতে দেশ টিভির প্রতিনিধি আবু আসলাম, সময় টেলিভিশনের ফটো সাংবাদিক আরফিন হোসেন, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক মইনুল হোসেন, চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাম্যান জনি, আজকালের খবরের প্রতিনিধি শাকিল আহমেদ, রংপুর চিত্রের ফটো সাংবাদিক  আফতাবুজ্জামান হিরু, দৈনিক পরিবেশ পত্রিকার দৈনিক করতোয়া’র রংপুর অফিস ফটো সাংবাদিক আলী হায়দার রনি, মায়াবাজার পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আরমান হক, এস আই গোলাম কিবরিয়া সহ ৩৫জন  গুরুতর আহত হন।

এমপির উপসি’তিতে সাংবাদিকদের পিটুনি থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে জাতীয় পার্টির কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পরে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারী ও এলাকাবাসি একত্রিত হয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ত্রি-মুখি সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিনত হয় পুরো ক্যাম্পাস। সংঘর্ষের সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসি এমপি আসফি শাহরিয়ারকে কলেজের মাঠে গন পিটুনি দেয়।

পরিসি’তি সামাল দিতে ১৪ রাউন্ড টিয়ারশেল রাবারবুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। তারপরেও পরিসি’তি সামাল দিতে পুলিশ হিমশিম খায়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের হোসেন ও পুলিশের দু’ এএসপির নেতৃত্বে আরো অর্ধশতাধিক পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনা স’লে যায়। পরে অনেকটা পরিসি’তি নিয়ন্ত্রনে আসে।

এদিকে গুরুতর আহত অবস’ায় এমপি আসিফ শাহরিয়ার ও সাংবাদিক আবু আসলামকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বেলা দেড়টায় ক্যাম্পাস ছাড়াও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে মেডিকেল মোড়, পূর্বগেটসহ আশেপাশের এলাকায়। এমপি আসিফ শাহরিয়ার আহত হওয়ার ঘটনায় জাপা সমর্থকরা বেলা পৌন দুই টায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মেডিকেল পূর্বগেট এলাকায় অবস’ান নেয়ায় রংপুর-গঙ্গাচড়া সড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।

এমপি আসিফ শাহরিয়ার জানান, নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে এলাকাবাসির শানি-পুর্ন বিক্ষোভ সমাবেশে পরিচালকের নির্দেশে পুলিশ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হামলা চালিয়ে আমাকে ও এলাকাবাসিকে আহত করেছে। একজন এমপিকে পুলিশের উপসি’তিতে এভাবে পিটুনি দেয়ার বিয়ষটি পৃথিবীতে বিরল । তিনি এ ঘটনায় দৃষ্টান-মূলক শাসি- দাবি করেন। নইলে লাগাতর আন্দোলনে যাওয়া হবেও বলে জানান তিনি। তবে তার নেতৃত্বে সাংবাদিক পেটানোর বিয়ষটি তিনি অস্বীকার করেন।

এদিকে হাসাপাতালের পরিচালক ডা. তৌফিকুল ইসলাম জানান, নিয়োগের কাজ সমাপ্ত করার জন্য হেলথ মিনিস্ট্রতে এসে প্রসিডিউরগুলো সমাপ্ত করেছি। তিনি বলেন, নিয়োগে কোন অনিয়ম হয় নি। বরং অবৈধ কোটার দাবিতে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করছে। কোতয়ালী থানার ওসি আলতাফ হোসেন জানান, রংপুর মেডিকের কলেজ হাসপাতালে সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক সহ কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছে। ক্যাম্পাসের পরিসি’তি বর্তমানে শান- রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here