জহুরুল ইসলাম জহির, রংপুর
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় হাসপাতালের কর্মচারি ইউনিয়ন রংপুর-১ আসনের জাপা এমপি মকবুল হোসেন আশিফ শাহরিয়ারকে প্রধান আসামী করে আরো ৭ জনসহ অজ্ঞাত নামা লোকদের নামে মামলা করেছে।
শনিবার রাতে রংপুর কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে, রমেক হাসপাতালে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করছিল। যে কোন পরিসি’তি মোকাবেলায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এরশাদের ভাতিজা এমপি আসিফ শাহরিয়ারের নামে মামলা হওয়ায় চরম ক্ষোভে রয়েছে রংপুর জাতীয় পার্টি। চলছে উত্তেজনা।
শনিবারের সংঘর্ষের বিষয়টি ভিন্ন পথে নেয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হাসপাতালের কর্মচারি দিয়ে ছাত্রদল নেতাদের জড়িয়ে মামলা করে একটি পক্ষ এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও একই কায়দায় রমেক কর্তৃপক্ষ এমপি আসিফসহ ওই ছাত্রনেতাদের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছে।
মামলার আসামীরা হলেন, রংপুর-১ আসনের এমপি মকবুল হোসেন শাহরিয়ার আসিফ, ছাত্রদল নেতা গ্যাদরা শাহীন, ম্যাক্স, সুমন, সাজু, কালা শাহিন, সাদ্দাম।
পুলিশ ও রমেক কর্তৃপক্ষ জানায়, গেল দেড় সপ্তাহ ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩য় ও ৪র্থ কর্মচারি নিয়োগে রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগ ৬০, ছাত্রলীগ ১০টি কোটার দাবী করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের সাথে কর্মচারিদের সংঘর্ষ এবং তাদের হাতে হাসপাতাল পরিচালক ডা: তৌফিকুর রহমান লাঞ্চিতও হয়েছেন।
হাসপাতালের একটি সুত্র জানিয়েছে, আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের দাবী অনুযায়ী ৭০টি কর্মচারী নিয়োগ কোটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরণের আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের দেয়া সকল আল্টিমেটাম তারা তুলে নিয়ে নীরব রয়েছেন। হাসপাতালের কর্মচারি নয় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। মুলত তারা হাসপাতালের কর্মচারিদের বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে।
পুলিশের একটি সুত্র ও হাসপাতাল অপর আরেকটি সুত্র জানায়,সরকারের অন্যতম শরিকদল রংপুর জাপাও আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের মত সুবিধা নিতে জাপা প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শারিয়ার আসিফ রংপুর-১ আসনের জাপা এমপি ৩০টি কোটা দাবী করেন। ওই কোটা বাস-বায়নের জন্য শনিবার ৭টি ট্রাকে করে তার নির্বাচিত এলাকা গংগাচড়া থেকে কয়েক হাজার লোক ও তাদের সাথে কাঁচা বাঁশের লাঠিসোঠা নিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করে। এসময় পুলিশ বাধাঁ দিলেও তারা বাঁধা না মেনে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যায়। সেখানেই এমপি আসিফের উত্তেজিত সমর্থকরা কলেজের বিভিন্ন স’াপনা ভাংচুর শুরু করলে কর্মচারীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে এমপি আসিফ ও সাংবাদিক আবু আসলাম গুরুতর আহত হন।
পুলিশের একটি সুত্র জানায়, রমেক হাসপাতালে শনিবারের সংঘর্ষটি ছিল রংপুর জাপার অপর একটি গ্রুপের পরিকল্পনা অনুযায়ী। কিন’ বিষয়টি এমপি আসিফ অজ্ঞাত ছিলেন। সে কারণেই তিনি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই হাসপাতালের কর্মচারিদের সাথে তার সমর্থকদের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ জানায়, ওই পরিকল্পনাটি হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে।
এদিকে জাপার এমপি আসিফ শাহরিয়ারের সাথে রংপুর ছাত্রদলের ৭ নেতাকে জড়িয়ে মামলা করায় হতবাগ হয়েছে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারি এবং রংপুরের সচেতন মহল। তারা বলছেন, বিষয়টি এখন ভিন্ন পথে নেয়ার জোড় চেষ্টা চলছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিষয়টি ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য স’ানীয় ছাত্রদল নেতাদের জড়ানো হয়েছে।
রংপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জহির আলম নয়ন জানান, শনিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতেল সংঘর্ষ ছিল জাপা এমপির ৩০টি কোটার দাবীতে কর্মচারিদের সাথে তার সমর্থকদের। কিন’ এখানে ছাত্রদল নেতাদের জড়িয়ে বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ছাত্রদল নেতারা মেধার বিশ্বাস করে। কোটা অনুয়ায়ী চাকরির চিন-া তারা করে না। তিনি ওই মামলায় জড়ানো ছাত্রদল নেতাদের নাম তুলে নেয়ার আহবান জানান। তা না হলে আমরাও কঠোর আন্দোলনে যাব।
রংপুর পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, শনিবারের বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে তদন- করে দেখা হবে আসলে কারা এর সাথে জড়িত। নিশ্চই অপরাধদের ছেড়ে দেয়া হবে না।
অপর দিকে, জেলা জাতীয় পার্টি রংপুর শহরে এমপি আসিফের উপর হামলা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে রোববার মিছিল করেছে।