জহুরুল ইসলাম জহির, রংপুর

রংপুরে নারী ও যৌতুকলোভী এক স্বামী স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে প্রাণনাশের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মারপিট করে শিশু সন-ানসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মামলা করায় আসামিদের অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকিতে সন-ান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। ঘটনাটি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরের মৌভাষা বামনটারী গ্রামে।

মামলার বিবরনে জানা গেছে, উপজেলার মৌভাষা বামনটারী গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে নুরুজ্জামান ওরফে আকুলের সাথে গত ৭ বছর আগে বিয়ে হয় একই এলাকার তালেবটারীর গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে ইয়াছমিন আরা রেশমার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় রেশমার পিতা নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র ও গহনাবাবদ আরো ২ লাখ টাকা প্রদান করেন। জামাতাকে নিজ খরচে এম,এ পাশ করান। তারপর টাকা দিয়ে একমি ওষুধ কোম্পানীতে চাকুরি নিতে সহযোগিতা করে। এর মধ্যে তাদের এক কন্যা সন-ানের জন্ম হয়।

রেশমার অভিযোগে জানা যায়, চাকুরিকালিন সময়ে স্বামী বাইরে থাকার সুবাধে পর নারীর প্রতি আশক্ত হয়ে পড়ে। বাড়িতে এসে নানা কারনে এবং বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে আরো ১ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে অপারগতা জানালে শ্বশুর শাশুড়ির পরামর্শে তাকে প্রায় শারিরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এরপরও সকল নির্যাতন সহ্য করে ঘর সংসার করতে থাকি। এনিয়ে এলাকায় ৮/১০ বার গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করে দিলেও যৌতুকের দাবিতে অনড় থাকে স্বামী ও তার পরবার।

গত ১১ ডিসেম্বর রাতে যেতৈুকের ১ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করে । এতে রাজি না হওয়ায় শ্বশুর শাশুড়ি এবং স্বামী বেদম মারপিট করতে থাকে এক সময় গলা চিপেধরে শ্বাসরোধ করে প্রাননাশের চেষ্টা করে। এসময় আত্মচিৎকারে পার্শ্ববর্তি বাড়ির লোকজন দৌড়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে। এরপরও যৌতুকের টাকা নিয়ে না আসা পর্যন- ঘর সংসার করবে না বলে সন-ান আর আমাকে এক বস্ত্রে বাড়ি থেকে অসুস’্য অবস’ায় বের করে দেয়।

রাতেই তারা আমাকে আমার পিতার বাড়িতে পৌছে দেয়। এমন অবস’া দেখে দ্রুত আমাকে রংপুর মেডিকের কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। হাসপাতাল থেকে সুস’্য হয়ে আসার পর গত ১৪ ডিসেম্বর আমার পিতা সহ এলাকার লোকজন ঘর সংসার করার জন্য স্বামীর বাড়িতে নিয়ে গেলে তারা আবারও যৌতুকের ১ লাখ টাকার কথা জানায় এবং তাদেরকে অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

রেশমার বাবা রফিকুল ইসলাম জানায়, রেশমার বিয়ের সময় আমি আমার জামাতাকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেই। এর পরেও প্রতিনিয়ত আমার মেয়ে রেশমাকে তারা নির্যাতন করত। এর কারণে আমি থানায় মামলা দায়ের করেছি।  আশা করবো প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস’া নিবে।
প্রতিবেশী তোফায়েল হোসেন জানায়, মৌভাষা তালেব মিয়া টারী গ্রামে মোজাহার আলীর পুত্র একমি ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটিভ নুরুজ্জামান আকুল (বর্তমানে নওগাঁর মান্দা থানায় বগুড়া ডিপোর অধীনে কর্মরত) পরোকিয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে গত দুই বছর থেকে স্ত্রী রেশমা খাতুনকে বেদম মারপিট করে আসছে। একাধিকবার তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স’ানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের উপসি’তিতে শালিসও হয়েছে। তবুও নুরুজ্জামান তার পরকীয়ার আসক্তি ছাড়তে পারে নি। অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় এবং স্বামীর অবহেলার কারণে একমাত্র কন্যাকে নিয়ে পালিয়ে পিতার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছে এই গৃহবধু।

গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম জাহিরুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ৩০ ধারায় মামলা হয়েছে। মামলা নং ২১, তারিখ ১৮/১২/২০১১ ইং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here