জহুরুল ইসলাম জহির, রংপুর
রংপুরে প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহে জনজীবন একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। একদিকে প্রচন্ড শীত আর অন্যদিকে হিমেল হাওয়ায় জুবুথুবু অবস’ায় কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষ। অন্যদিকে ঘনকুয়াশার ঢাকা পড়েছে পুরো অঞ্চল। দুপুর পর্যন- হেড লাইট জ্বালিয়ে যান বাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রচন্ড শীতে গত ৪৮ ঘন্টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউমোনিয়া আর শ্বাস কষ্ট জনিত রোগে আক্রান- হয়ে চিকিৎসাধিন ১২ শিশু সহ ১৮ জন মারা গেছে।
এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার রংপুরে এ শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। সহকারি আবহাওয়াবিদ এমদাদ হোসেন জানান গতকাল রংপুরে সব্বোর্চ তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী আর সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলে তিনি জানান ।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে ১৮ জন মারা গেছে তারা হলেন বাবু (১৫দিন) বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ , বাবু (২৩দিন) বাড়ি রংপুরের তামপাট গ্রামে, বেবী ১ মাস বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ায়, মমতা (দেড় মাস) বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরে , বাবু ২৫ দিন বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে , বাবু ৯ মাস বাড়ি রংপুরের কাউনিয়ায়, বাবু ১২ দিন বাড়ি শহরতলীর কেরানীহাট গ্রামে , বেবী ২০ দিন বাড়ি লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর গ্রামে, বাবু ২৮ দিন বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা, রংপুরের পীরগাছার বেবী ২৪ দিন ও বেবী ২৯দিন। এ ছাড়াও শ্বাস কষ্ট জনিত রোগে মারা গেছে ৬ জন। এরা হলেন কুড়িগ্রামের মমতাজ উদ্দিন (৬০), গঙ্গাচড়ার আবুল হোসেন (৭০), সালাম মিয়া (৬৫) , মর্জিনা বেগম (৬৮) রেজিনা বেগম (৬৫), সালমা বেগম (৬৭) ।
এ ব্যাাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. তৌফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস’ায় মারা যাবার ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে নিউমোনিয়া আর শ্বাস জনিত কষ্ট রোগে আক্রান- শিশুদের সংখ্যা এবার অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশী। তার পরেও শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ সহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি ।
প্রচন্ড শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে লাখো শ্রমজিবী আর ক্ষেত মজুর। প্রচন্ড কুয়াশা আর হাড় কাপানো শীতের কারনে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেনা । ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহানে অর্দ্ধাহারে মানবেতর ভাবে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের । অন্যদিকে শীত বস্ত্রের অভাবে প্রায় ২ লাখ সহায় সম্বলহীন মানুষ আগুন জ্বালিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এখন পর্যন- শীতার্ত মানুষের মাঝে কোন শীত বস্ত্র বিতরন করা হয়নি ।
তবে জেলা ত্রান ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান জানান, সাড়ে ৬ হাজার কম্বল ইতিমধ্যেই জেলার ৮ উপজেলায় বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে । আরও অনেক শীতবস্ত্র বরাদ্দ চেয়ে জরুরী বার্তা প্রেরন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই শীত বস্ত্র চলে আসবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি ।