ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::

যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিনীদের মাঝে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের (২১ ফেব্রুয়ারি) বার্তা ছড়িয়ে দিতে মাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজের সিটি হলের সামনে ওঠানো হলো বড় আকারের সাইনবোর্ড। ক্যামব্রিজ সিটি মেয়র সুম্বুল সিদ্দিকীর উদ্যোগে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এ সাইনবোর্ডটি ওঠান বলে জানিয়েছেন ক্যামব্রিজ প্রবাসী ভিনগোলার্ধের কর্নধার কবি ও ছড়াকার বদিউজ্জামান নাসিম। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ক্যামব্রিজ শহরটি নানান বিবেচনায় বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ন শহর। এই শহরের কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের (২১ ফেব্রুয়ারি) বার্তা ছড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে বাঙালি হিসেবে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্ব স্ব একালায় সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বার্তা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করলে দেশ ও জাতি নিঃসন্দেহে উপকৃত হবে। তিনি ক্যামব্রিজ সিটি মেয়র সুম্বুল সিদ্দিকীকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এদিকে, গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ছুটি ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে আবারও বিল উত্থাপন করেছেন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং। নিউ ইয়র্কের ষষ্ঠ কংগ্রেসনাল ডিসট্রিক্টের ডেমোক্রাট দলীয় কংগ্রেসওম্যান মেং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের লক্ষ্য ও আদর্শকে সমর্থন করে ২১ ফেব্রুয়ারি ছুটি ঘোষণা করে একটি কংগ্রেসনাল রেজোলিউশন গঠনের জন্য তিনি প্রতিনিধি পরিষদকে আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, একুশে ফেব্রুয়ারি-শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এ দিনে (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহিদ হন।
৯ জানুয়ারি ১৯৯৮ কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানেরও দাবি জানান। ২৩ জানুয়ারি ১৯৯৮ জাতিসংঘ থেকে উত্তর আসে যে জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, এ সংস্থা কোনো ব্যক্তির আবেদনে বিবেচনায় নিতে পারে না। আবেদন আসতে হবে জাতিসংঘের যে কোনো সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে। এ প্রেক্ষিতে রফিকুল ইসলাম কানাডা প্রবাসী আরেক বাংলাদেশি নাগরিক আবদুস সালামকে নিয়ে সাতটি ভিন্ন ভাষার ১০জন সদস্য মিলে দ্য মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার অব দ্য ওয়ার্ল্ড নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন। ২৯ মার্চ ১৯৯৮ এ সংগঠনের পক্ষ থেকে আবার ১০ সদস্যের স্বাক্ষর সম্বলিত সেই একই প্রস্তাব জাতিসংঘে পাঠানো হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের অফিস থেকে জানানো হয়, এটির জন্য যোগাযোগ করতে হবে প্যারিসে অবস্থিত ইউনেস্কো’র সাথে। ৪ এপ্রিল ১৯৯৯ ইউনেস্কো ফ্যাক্সে পাঁচটি দেশের নাম এবং তাদের ইউনেস্কো অফিসের ঠিকানা দিয়ে ঐ সব দেশকে প্রস্তাবটি জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপনের অনুরোধ জানায়। দেশ পাঁচটি হচ্ছে- কানাডা, ভারত, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, এবং বাংলাদেশ। অবশেষে ৫ অক্টোবর-১৫ নভেম্বর ১৯৯৯ অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো’র নির্বাহী পরিষদের ১৫৭তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি স্বীকৃত লাভ করে। এরপর ইউনেস্কো’র দ্বিবার্ষিক ৩০তম সাধারণ সভার শেষ দিন অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। সেদিনই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। উপস্থিত ১৮৮টি সদস্য রাষ্ট্রের কেউই এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেনি।

ইউনেস্কো’র সাধারণ সভা প্রতি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ সালে প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here