মালিক উজ জামান, যশোর প্রতিনিধি ::
যশোরে এবার ১৬০৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ জেলায় পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে ১৩৪০ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৪৭০ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অফিস মতে, জেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে মণিরামপুরে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। কম আবাদ হয়েছে অভয়নগর উপজেলায় মাত্র ১২ হেক্টর জমিতে। এছাড়া সদর উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে ১৩৬ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ১৮৫ হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৮৫ হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ৩২০ হেক্টর, বাঘারাপাড়া উপজেলায় ৩২ হেক্টর এবং কেশবপুর উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে।
যশোর সদরের সাতমাইল এলাকার কৃষক ইসমাইল জানান, এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। আগামী মাসের শুরুতে তিনি পেঁয়াজ বাজারে তুলবেন। আমদানি বন্ধ হওয়ায় ভালো দামের আশা তার।
বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের কৃষক জসিম বিশ্বাস জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। ফলন ভালো
হয়েছে। কেজি প্রতি ৩০ টাকা দাম পেলে লাভ হবে। শুনেছি সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এতে করে বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম ভালো মিলবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, জেলায় এবার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে ১৩৪০ হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাবে। কৃষকরা যদি তাদের উৎপাদিত ফসলের ভালো দাম পায় তাহলে পরবর্তীতে সেই ফলনের আবাদ বেশি করে থাকেন। সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার তারা লাভবান হবেন।
বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে গত ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করেছে সরকার। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি। সরকার ইমপোর্ট পারমিট না দেওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ আর আসছেনা। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া জানান, চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৯৮৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে এসআরও (স্ট্যাটুটারি রুলস অ্যান্ড অর্ডার) এর মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করত। তবে সেটা ১৫ মার্চের পর আর থাকছে না। দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে সেই কথা বিবেচনা করে ও দেশের কৃষকদের পেঁয়াজের বাজার মূল্য সঠিক পাওয়ার জন্য ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে করে কৃষকরা চাষকৃত পেঁয়াজের সঠিক মূল্য পাবেন। বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, ১৫ মার্চের পর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে।
শহরের বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। তবে প্রতিবার রমজানের সময় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই সরকারকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।
বেনাপোল বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শামিম হোসেন জানান, চাহিদা কম থাকায় এবার রোজার আগে আপাতত পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা নেই। তবে দেশে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানি বন্ধ না করে কোটা নির্ধারণ করার দাবি জানান তিনি।