ইয়ানূর রহমান, যশোর প্রতিনিধি ::

যশোরের পল্লীতে ৩০ হাজার টাকা জমা দিলেই একজন গ্রাহক পাবেন ছয় লাখ টাকা দামের তিন রুমের একটি পাকা বাড়ি। শুধু তাই নয়, ১০ হাজার টাকায় প্রতি মাসে মিলছে প্রায় তিন হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী, এক লাখ টাকা জমা দিলে মাসে পাবেন ২০ হাজার টাকা। এভাবেই একটি প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের বেজিয়াতলা-নগর গ্রামে ঘটে চলেছে এ ধরনের ঘটনা। এ ঘটনায় সাময়িক কেউ কেউ সুবিধা পেলেও ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্খায় রয়েছে এলাকাবাসি। জেলা প্রশাসন বলছে, অভিযোগ পেলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলাকার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই অঞ্চলের শিয়া মতাবলম্বী কতিপয় মানুষ দরিদ্রদের টার্গেট করে পরিবার প্রতি ১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। এরপর তাদের মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৫ কেজি চাল, চার কেজি আটা, তিন লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ডাল এবং চার কেজি আলুর একটি প্যাকেজ ধরিয়ে দেন। এছাড়া গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এককালীন ৩০ হাজার এবং মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা করে নিচ্ছেন। এসব লেনদেনে তারা কোনও ডকুমেন্ট প্রদান করছেন না। সম্পূর্ণ মুখের কথার ওপর ভিত্তি করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চলছে।

পানিসারা ইউনিয়নের নগর গ্রামের গৃহবধূ শিউলি বেগম বলেন, ‘আমি চাল-ডালের দুটি এবং একটি বাড়ির জন্য মোট ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। গত তিন মাস ধরে চাল-ডাল-তেল ইত্যাদি পেয়ে আসছি। তারা বলেছেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করবে। যদি শেষ পর্যন্ত না করে দেয় তখন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবে চলছে, তাতে ভালো মনে হচ্ছে। যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে তো আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। সে কারণে আশঙ্কা থেকেই যায়।’

বেজিয়াতলা গ্রামের বর্গা চাষি সাইদুল ইসলাম নিয়েছেন চাল ডালের একটি প্যাকেজ। তিনি বলেন, পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এলাকার অনেকে চাল-ডালের জন্য ১০ হাজার করে টাকা জমা দিয়েছে। আমি চার মাস ধরে চাল-ডাল, তেলসহ ছয়টি আইটেম পাচ্ছি। এসব মালের বাজার মূল্য প্রায় তিন হাজার টাকা।

একই এলাকার গৃহবধূ ফিরোজা বেগমও পাঁচ মাস ধরে চাল-ডাল তেল ইত্যাদি পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শিয়া মতাবলম্বী শার্শা উপজেলার স্বরূপদহ গ্রামের রফিকুল ইসলাম আমাদের এলাকায় তিন ধরনের কর্মসূচি শুরু করেছেন। চাল-ডাল-তেল, ঘর ও মাসে নগদ টাকার পাশাপাশি শুনছি নতুন আরেকটি প্রজেক্ট শুরু করেছেন। সেটি হচ্ছে ১০ হাজার টাকায় এরপর থেকে চাল-ডাল তেল বাদে বিকাশে নগদ দুই হাজার করে টাকা দেবেন।’

বেজিয়াতলা গ্রামের আরেক গৃহবধূ ঝরনা বেগম নিয়েছেন ঘরের প্রকল্প। তিনি নিজের জন্য একটি এবং পাশের গ্রামে থাকা তার দুই ভাইয়ের জন্য দুটি ঘরের জন্য মোট ৯০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই তাদের কাছে টাকা দিয়েছি। এজন্য তারা কোনও কাগজপত্র দেয়নি।

প্রকল্পগুলোর সঙ্গে যিনি সরাসরি জড়িত সেই রফিকুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো পালিয়ে যাবো না, হারিয়ে যাবো না। ইরানি শিয়া সম্প্রদায়ের ধনী মানুষের সহায়তায় আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যে বাড়ি দেওয়া হবে, সেখানে প্রায় ছয় লাখ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হবে।’ কারা ভর্তুকি দেবে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান। তবে আমাদের কাগজপত্র নেই। কিন্তু কাজ তো করছি। খুব শিগগিরই ইমাম মাহাদী নামে একটি ট্রাস্ট করে সরকারি অনুমোদন নেবো।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শিয়া সম্প্রদায়ের যশোরের সংগঠন ইনকিলাব মাহাদি মিশনের পরিচালক ঐতিহাসিক যশোর মুড়লীর ইমাম বাড়ার সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম বলেন এসব কাজের সঙ্গে শিয়া সম্প্রদায়ের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। ব্যক্তিগত ভাবে এই কাজ করছেন রফিকুল ইসলাম। আমাদের সামনে ডেসটিনি, কোটচাঁদপুরের কাজলের হুন্ডিসহ নানা কোম্পানির প্রতারণার অভিজ্ঞতা আছে। রফিকুলকে প্রশ্রয় দেওয়া কখনও উচিত হবে না। আমি বর্তমানে দিল্লিতে আছি। দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ কেউ আমাদের কাছে এখনও দেয়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here