ইয়ানূর রহমান ::

যশোরে অবৈধভাবে পরিচালিত মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফের রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এমবিবিএস চিকিৎসক মোজাম্মেল হকের ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে ওই রোগী মারা যান বলে দাবি স্বজনদের। মৃত আসমা বেগম (৩২) ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের বামন আলী চাপাতলা গ্রামের ড্রাইভার গোলাম রসুলের স্ত্রী।

স্বজনরা জানান, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড পেট ব্যথায় ভুগছিলেন আসমা। পল্লী চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে তাকে ভর্তি করা হয় যশোর শহরের ঘোপ জেলখানা রোডের আলোচিত মাতৃসেবা ক্লিনিকে। সেখানে রোগীর বর্ণনা শুনে অ্যাপান্টিসাইটিস হয়েছে বলে  দ্রুত অপারেশনের নির্দেশনা দেন ডা. মোজাম্মেল হক। রোববার ডা. মোজাম্মেল হক রোগীর অস্ত্রোপচার কক্ষে নেন।

আসমার স্বামী গোলাম রসুল জানান, অস্ত্রোপচারে কয়েক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় একবার রোগীর জ্ঞান ফিরলে চিৎকার করে ওঠে। দরজার অপর পাশ থেকে রোগীর চিৎকার শুনতে পেরে কারণ জানতে চাইলেও উত্তর দেয়া হয়নি। তবে গোলাম রসুলের ধারণা দীর্ঘ সময় অপারেশনের কারণে রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে। পরে আবার তাকে অজ্ঞানের ইনজেকশন দেয়া হয়।

গোলাম রসুল আরও জানান, অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে রোগীকে অজ্ঞান অবস্থায় বের করে দ্রুত খুলনায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সন্ধ্যায় আসমাকে খুলনার একটি হাসপাতালে নিলে আইসিইউতে নেয়া হয়। পরের দিন সকালে (সোমবার) খুলনা
হাসপাতালের চিকিৎসক আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গোলাম রসুলসহ স্বজনদের অভিযোগ, ডা. মোজাম্মেল হক রোগী আসমাকে অস্ত্রোপচারের আগে নিজেই অজ্ঞানের চিকিৎসকের দায়িত্বে ছিলেন। তার ভুল অস্ত্রোপচারে আসমার মৃত্যু হয়েছে। এখন ঘটনা চেপে যাওয়ার জন্য ডাক্তারের পক্ষ বিভিন্ন মহল দিয়ে তদবির করানো হচ্ছে।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মা মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আগে নাম ছিলো নুরমহল ক্লিনিক। বিগত দিনে নুরমহল ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুসহ নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগে আলোচিত হয়। নূরমহল ক্লিনিক স্থাপনের পর অনুমোদন পাওয়ার পর মালিক পক্ষ স্বাস্থ্য নীতিমালা উপেক্ষা করে আসছিলো। সেখানে রোগীর অস্ত্রোপচার, অজ্ঞান করা, নানা রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতেন  ডা.মোজাম্মেল হক।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে ডা. মোজাম্মেল হকের ভুল অস্ত্রোপচারে এর নারী মারা যান। এই ঘটনায় তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায়ের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এমদাদুল হক রাজু। তদন্ত কমিটি ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও সেখান নানা অনিয়মের সত্যতা পান। ওই তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠিয়ে দেয় যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায়। তদন্ত প্রতিবেদনে নূর মহল ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও রোগীর মত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। ২ নভেম্বর নূর
মহলের লাইসেন্স বাতিলের পত্র আসে সিভিল সার্জন অফিসে। পরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর সাইনবোর্ড পাল্টে নূরমহলের নাম দেয়া হয় মাতৃসেবা।

৬ মাস আগে হালনাগাদ লাইসেন্স না থাকার কারণে মাতৃসেবা বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন সদ্য বিদায় সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন। এসময় ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহারের প্যাডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র আগুনে পোড়ানো হয়।  বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রোগীর অস্ত্রোপচার,  চিকিৎসাসেবা প্রদান ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে ডা. মোজাম্মেল হক জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই রোগী (আসমা) মারা গেছে। আর কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

যশোরের নবাগত সিভিল সার্জন ডা. বিপুল কান্তি বিশ্বাস জানান, ডা. মোজাম্মেল হকের ভুল অস্ত্রোপচারে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here