ইয়ানূর রহমান, যশোর প্রতিনিধি ::

এখন আর পরমাণুচিকিৎসার জন্য খুলনা কিংবা ঢাকা নয়, যশোরেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা কার্যক্রম। যশোর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপিত নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যায়েলেন্ড সায়েন্সেস (ইনমাস) বা পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে গত ১২ সেপ্টেম্বর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর ফলে সরকার নির্ধারিত স্বল্পমূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হওয়ায় সঠিক সময়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দ্বার উন্মোচন হলো।

কেন্দ্রের পরিচালক ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছেন।

ইনমাস বা পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র যশোরের পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার জামিউল হোসাইন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ২৯টি টেস্ট শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে, থাইরয়েডর ল্যাব টেস্ট টি-৩, টি-৪, টিএসএইচ, এফটি-৩, এফটি-৪, বিএমডি, ক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েড, হাইপারথাইরোয়েড, পোস্ট সার্জারি সিএ থাইরয়েড প্যাসেন্ট ফলোআপ, ফোরডি এবং হাইরেজুলেশন আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ডুপ্লেক্স স্টাডি টেস্ট। খুব শীঘ্রই আরও ১৬ প্রকার টেস্ট করানোর কার্যক্রম শুরু হবে বলেও ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে। চিঠিপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, পরামানু আনন্দের খবর।

হাসপাতালের সকল ডাক্তারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এর ফলে রোগ নির্ণয় করে দ্রুত সময়ে রোগীর সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।

২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদেও নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যশোরসহ দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। পুরোপুরি সরকারি ব্যয়ে ২০২০ সালের মধ্যেই কেন্দ্র গুলো স্থাপনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। করোনা মহামারিসহ নানা সংকট সমস্যা কাটিয়ে কেন্দ্রগুলোর ভবন নির্মাণ, রোগ নির্ণয়ের সর্বাধুনিক মেশিন প্লান ও জনবল পদায়ন সম্পনড়ব হয়েছে চলতি বছর। এরপরই শুরু হলো রোগ নির্ণয় কার্যক্রম।

ইনমাস বা পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র যশোরের পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার জামিউল হোসাইন গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রটি থেকে মানুষ কম খরচে থাইরয়েড, কিডনি, লিভার ও বোন ক্যান্সারসহ নানা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পাবেন। পরামানু শক্তি কমিশনের নির্দেশনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর একযোগে যশোরসহ খুলনা বিভাগের আরও দু’টি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে স্থাপিত কেন্দ্রে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার শহীদ সোহ্ওয়ারদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় বহ্মব্যাধি ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে স্থাপিত কেন্দ্র গুলো রোগ নির্ণয়ের কার্যক্রম হয়েছে।

ডাক্তার জামিউল হোসাইন আরও জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শীঘ্রই কেন্দ্রগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এ ব্যাপারে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তথ্যানুযায়ী, যশোর সহ নতুন ৮টি ইনমাস স্থাপনের আগে দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনমাস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপিত ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যায়েলেন্ড সায়েন্সেসের (নিনমাস) মাধ্যমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরমাণু চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here