মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে সীমাহীন দূর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাযসে দীর্ঘদিন ধরে দুই কর্মচারীর সহযোগীতায় সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতি ও নৈরাজ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জিম্মি হয়ে পড়েছে।
তাদের নেপথ্যে রয়েছেন মৌলভীবাজার বিউবো’র এমএলএস (কাম) গার্ড বিদ্যুৎ সিবিএর সভাপতি কদ্দুস আহমদ ও সাধারন সম্পাদক জুনিয়র হিসাবরক্ষক আজমল আলী। গোপন লেনদেনের মাধ্যমে হাজার হাজার ফুট লাইন টেনে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স’াপনায় অবৈধভাবে প্রায় পাঁচশতাধিক মিটার স’াপন করে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়া অনেক জায়গায় মিটার ছাড়া দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। তাদের এ অনিয়ম দূর্নীতির ফলে একদিকে বিউবো’র গ্রাহকরা লোডশেডিংএ অতিষ্ট। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। একই অবস’া বিরাজ করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স’ানে। তবে সিবিএর দুই নেতা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মৌলভীবাজার বিউবো’র এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স’াপনায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে এককালীন ও মিটার প্রতি নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা আদায় করে নিজেদের পকেট ভারী করা হচ্ছে এবং অবৈধভাবে বিক্রিকৃত বিদ্যুৎ জ্বালানীর পরিমান গায়েব করার জন্য প্রতি ৫/৬ মাস পর পর লাইনম্যানস হেল্পারের সহযোগীতায় মিটারগুলো পরিবর্তন করছেন কর্তপক্ষ।
দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন না করে কাগজপত্রবিহীন অবৈধভাবে মৌলভীবাজারের উত্তর জগনাথপুর, বনগাঁও এলাকায় ১৭টি, শ্যামলী রোডে ৪টি, শ্রীমঙ্গল সড়কের ইট ভাটা এলাকায় ৭ টি, সাবিয়া এলাকায় ৮ টি ও শেখের গাঁও এলাকায় ৭টি পাইপের খুটি সহ অসংখ্য লাইন স’াপন করে করে অর্ধশতাধিক মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন সিবিএ নেতারা। এছাড়া অনেকগুলো বাড়ীতে মিটারবিহীন সংযোগও রয়েছে।
এসব সংযোগ দিতে প্রতিটি পরিবার থেকে ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিউবো’র এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলও দিতে হয় না গ্রাহকদের। এ ছাড়া শমশেরনগর সড়কের মাইজপাড়া এলাকায় অফিসকে লিখিত ভাবে অবগত না করে জনৈক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ১১ হাজার কেভি লাইনের টাওয়ার পরির্বতন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোডের্র সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্নীতিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে ছেয়ে গেছে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকা। গ্রাহকদের নামে ব্যাংক একাউন্টের ন্যায় আলাদা আলাদা একাউন্ট থাকলেও মিটারের মালিকদের নামে কোন একাউন্ট নেই অর্থাৎ ঐ সবগুলো মিটারই দাপ্তরিক কাগজপত্রবিহীন। এর প্রমান- পাওয়া যায় একাটুনা ইউনিয়নের মনু ব্যারেজের উত্তর পাড় উত্তরকোনা, বুড়িকোনা, ধনাশ্রী, সাবিয়া, গোজারাই, উত্তর জগনাথপুর, বনগাঁও, মোস-ফাপুর, বড়হাট ও ফরেষ্ট অফিসরোডস’ বস্তি ও বিভিন্ন কলোনি এলাকায়।
তাছাড়া শহর ও শহর সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্টান ও বাসা-বাড়ীতে দাপ্তরিক কাগজপত্রবিহীন অনুরুপ মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে বলে বিশ্বস- সূত্রে জানা গেছে। অপর দিকে শহরতলীর সাবিয়া এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়িতে দেড় যুগ ধরে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ৮ টি খুঁটি বসিয়ে ১১ হাজার ভলটিজের একটি নতুন লাইন চালু করলে তাতে বাধ সাধেন মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুত সমিতির কর্মকর্তারা। পল্লী বিদ্যুতের আপত্তির মুখে গত বছরের ১৬ মে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভ্রাম্যমাণ আদালত এই লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
কিন’ রহস্যজনক কারণে মাস দু’য়েক পড়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এই লাইনের পুনরায় সংযোগ প্রদান করেন। বর্তমানে এই বাড়িতে পল্লী বিদ্যুৎ এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দুটি লাইনই চালু আছে। এই ব্যাপারে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান আকন্দ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ থাকা সত্ত্বেও সাবিয়া গ্রামে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড একই বাড়িতে নতুন সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের মৌলভীবাজার জোনাল অফিসের জনৈক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ আইনে যেখানে পল্লী বিদ্যুতের লাইন চালু আছে সেখানে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের লাইন টানা বা সংযোগ দেওয়া যেমন অবৈধ ঠিক তেমনই যেখানে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের লাইন চালু আছে সেখানে পল্লী বিদ্যুতের লাইন টানা বা সংযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন’ মৌলভীবাজারে কেউ এই আইনের তোয়াক্কা করছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগের চীফ ইঞ্জিনিয়ার জানান, মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিম্ন পর্যায়ের কতিপয় সিবিএ নেতা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস’া নেওয়া হয়েছে। তাদের সময়ের বিভিন্ন কার্যক্রম তদন- করে দেখা হচ্ছে। শী্রঘই অবৈধ ভাবে টানা লাইন ও সংযোগের ব্যাপারে আইনত ব্যবস’া নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হজরত আলী জানান, অবৈধ ভাবে লাইন টেনে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কিংবা মিটারবিহীন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি অবগত নন। এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস’া নেওয়া হবে।
সজল দেব, মৌলভীবাজার