সামিন আরহাম ,  স্পোর্টস ডেস্ক :: ভালো ফুটবল খেলেও জয় পেলো না বাংলাদেশ। গোল মিসের মহড়ায় ভুগতে থাকা দলটি দ্বিতীয়ার্ধে বরং পিছিয়েই পড়েছিল। তবে সেখান থেকে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত লেবাননের সঙ্গে ১-১ ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা।

আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে প্রথমার্ধেও বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। কিন্তু গোল মিসের মহড়ায় এগিয়ে যেতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণ আর গোলরক্ষক শ্রাবণের ভুলে ৭২ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

৬৭ মিনিটে লেবাননকে এগিয়ে দেন মাজেদ উসমান। তবে সে গোল শোধ করতে খুব একটা সময় নেয়নি বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দুর্দান্ত এক শটে ৭২ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান মোরসালিন।

কিংস অ্যারেনায় আগের তিন ম্যাচের একটিতেও হারেনি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ ড্রয়ের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে জিতেছিল। তাই তো দেশের নতুন এই ভেন্যু পয়ন্তই বাংলাদেশের জন্য।

লেবাননের বিপক্ষে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এ প্রসঙ্গটা উঠেছে ঘুরেফিরে-বাংলাদেশ কি পারবে ঘরের এই ভেন্যুতে না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখতে?

৬৮ মিনিটে যখন রক্ষণ আর গোলরক্ষকের ভুল বোঝাবুঝিতে গোল খেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে, তখন ধরেই নেওয়া হয়েছিল হয়তো এই ভেন্যুতে প্রথম হারটা লেখা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নামের পাশে।

কিন্তু বাংলাদেশ শুরু থেকে যে ফুটবলটা খেলছিল, তাতে হার মোটেই প্রাপ্য ছিল না। ম্যাচ ফেরার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই লেবাননের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৫ মিনিটের ব্যবধানেই বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরে আসে দুর্দান্তভাবে।

মদকাণ্ডে মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নিষিদ্ধ ছিলেন মোরসালিন। বসুন্ধরা কিংস সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নিলেও দ্বিতীয় ম্যাচে কোচ বিবেচনায় আনেননি তাকে।

তবে অস্ট্রেলিয়া সফরে নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে খেলিয়েছেন কোচ। রাকিব হোসেন দুই হলুদ কার্ডে সাসপেনশনে থাকায় ঘরের মাঠে লেবাননের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পান মোরসালিন। দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করলেও শেষ পর্যন্ত সেই মোরসালিনই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে উদযাপনের উপলক্ষ্য এনে দেন কিংস অ্যারেনায়।

ম্যাচটি যারা দেখেননি তাদের কাছে মনে হবে বাংলাদেশ ঘাম ঝরিয়ে ম্যাচটি ড্র করেছে। পিছিয়ে পরে ম্যাচে ফেরায় বিষয়টা তেমনই। তবে বাংলাদেশ অতিথি দলের চেয়ে অনেক বেটার ফুটবল খেলেই এই ম্যাচে অর্জন করেছে এক পয়েন্ট।

দুই অর্ধের শুরতে কিছু সময় বাংলাদেশ এলোমেলো ফুটবল খেলেছে। বাকি সময়ের প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশের। লেবাননের চেয়ে গোলের সুযোগও বেশি পেয়েছিল বাংলাদেশ।

এই মাঠে এর আগে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের চেয়ে অন্য লেভেলের দল লেবাননের বিপক্ষে যে ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ, তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হবে।

রক্ষণে সর্বশক্তি নিয়োগ করে ফুটবল এখন আর খেলে না বাংলাদেশ। গত ১৬ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ বাদ দিলে বাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ খেললো সাম্প্রতিক সময়ের সেরা ম্যাচটি।

আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে বলেছিলেন সমর্থকদের। এ ম্যাচের পর লাল-সবুজ জার্সিধারীদের ওপর দর্শক-সমর্থকদের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে তা নিশ্চিত। ৭৯ ধাপ এগিয়ে থাকা একটা দলের বিপক্ষে এভাবে বুক চিতিয়ে ফুটবল খেলে ফাহিম-মোরসালিনরা সমর্থকদের হৃদয়ই জয় করে নিয়েছেন।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশের এখনো ম্যাচ বাকি চারটি। এর মধ্যে ঘরের মাঠে খেলবে অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। লড়াইয়ের এই চেতনা ধরে রাখতে পারলে পরের ম্যাচগুলো থেকেই আসতে পারে আরো পয়েন্ট। গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া আছে বলে বাংলাদেশ দ্বিতীয় হওয়ার লড়াইটা ভালোভাবেই করতে পারবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here